গত শনিবার মধ্যরাতে বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাঙ্কের একাধিক শাখায় আগুন লেগে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, মীরপুরে অবস্থিত গ্রামীণ ব্যাঙ্কের সদর দফতর-সহ বাংলাদেশের একাধিক শহরের শাখাগুলিতে রহস্যজনকভাবে আগুন লেগে গিয়েছিল। দাবি করা হচ্ছে, ৪০টির কাছাকাছি শাখায় আগুন লেগেছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে সব জায়গাতেই প্রায় এক সময়। জানা যাচ্ছে, রাত আড়াইটে থেকে সাড়ে তিনটের মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে। ফলে নানান ধরণের প্রশ্ন উঠছে জনমানসে।
আমরা সবাই জানি, বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কর্ণধার হলেন ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস। যিনি বর্তমানে বাংলাদেশ অন্তরবর্তীকালীন সরকারের প্রধান। ফলে তারই প্রতিষ্ঠানে বারবার আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে কিভাবে সেটা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের একাধিক শাখায় আগুন লেগেছিল। আবার গত মাসের মাঝামাঝি সময়েও কয়েকটা শাখায় আগুন লাগে। এবার একযোগে প্রায় ৪০টি শাখায় আগুন লাগলো। ফলে এটা হালকা ভাবে নেওয়ার মতো বিষয় মোটেই নয় বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। যদিও আশ্চর্যজনকভাবে একটি ঘটনাও সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়নি। ফলে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে। কেন সংবাদ মাধ্যম এই খবর দিল না? জানা যাচ্ছে, স্থানীয় এনসিপি নেতা ও সমন্বয়করা সাংবাদিকদের হুমকি দিচ্ছেন এই ধরণের খবর না করতে। এখানেই উঠছে প্রশ্ন, তাঁরা এটা কেন করছেন? তাঁদের স্বার্থ কি?
সূত্রের খবর, গ্রামীণ ব্যাঙ্কের বহু নথিপত্র ও রেজিস্টার নষ্ট হয়েছে এই আগুনের ঘটনায়। পুড়ে গিয়েছে বহু দলিল দস্তাবেজও। ফলে মাথায় হাত সাধারণ মানুষের। সেই সঙ্গে আতঙ্কিত গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নিচুতলার কর্মীরা। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এই ঘটনা নেহাত কাকতালীয় নয়। এক সঙ্গে, একই সময়ে কখনও এতগুলো শাখায় আগুন লাগতে পারে না। বিশেষ করে গত শনিবার রাত থেকেই বাংলাদেশের বহু জায়গায় প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিলো। কার্যত বৃষ্টির মধ্যেই পুড়ে যায় বহু শাখা। তাই মনে করা হচ্ছে, কেউ বা কারা আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন ইচ্ছাকৃতভাবে। আবার জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা রটিয়ে দিচ্ছেন এই আগুনের পিছনে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লীগ দায়ী। যদিও গ্রামীণ ব্যাঙ্কের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস বা ওই ব্যাঙ্কের কোনও শীর্ষ কর্তা এই বিষয়ে মুখ খোলেননি। তবে বাংলাদেশের কয়েকজন ইউটিউবারের দাবি, গ্রামীণ ব্যাঙ্কের সদর দফতর থেকেই সমস্ত মিডিয়া হাউসগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তাঁরা যাতে আগুনের ঘটনা নিয়ে কোনও খবর না করে। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতে যারা আগুনের ভিডিও পোস্ট করেছিলেন তাঁদেরও হুমকি দিয়ে পোস্ট ডিলিট করতে বাধ্য করিয়েছে স্থানীয় এনসিপি নেতারা।
গ্রামীণ ব্যাঙ্কের একাধিক শাখায় আগুন লাগার ঘটনার কারণ নিয়ে একাধিক তত্ত্ব সামনে আসছে। যেমন ছাত্র লীগকে দায়ী করা হচ্ছে, আওয়ামী লীগকে বদনাম করার উদ্দেশ্যে। তেমনই আবার কেউ কেউ বলছেন, গ্রামীণ ব্যাঙ্কের অন্দরেই নাশকতা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ভিতরে নানা গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে অসংখ্য দুর্নীতির অভিযোগ। সবকিছু আড়াল করতেই এই ধরণের নাশকতা ঘটানো হচ্ছে। আবার একটি অংশ মনে করছে, এর পিছনে রয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি। এই মুহূর্তে মুহাম্মদ ইউনূসের স্নেহধন্য এনসিপি ক্রমশ রাজনৈতিক জমি হারাচ্ছে। ফলে গ্রামীণ ব্যাঙ্কে নাশকতা করে স্থানীয় স্তরে ফায়দা লোটার চেষ্টা।
গত বছরের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময় থেকে বাংলাদেশ জুড়ে যে অরাজকতা চলছে, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ হয়েছে তাঁর জন্য অনেকেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন বা এনসিপিকেই দায়ী করছে জনতা। এতে ছাত্র নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। কিন্তু আসন্ন নির্বাচনের আগে নিজেদের ভাবমূর্তি ফেরাতে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের একাধিক শাখায় আগুন ধরিয়ে আওয়ামী লীগের ঘাড়ে দোষ চাপানো হচ্ছে। যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তবে কারণ যাই হোক, মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাঙ্কে রহস্যময় আগুন অনেক প্রশ্নই তুলে দিয়েছে।
Discussion about this post