মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। বাংলাদেশি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটু ঢুঁ মারলেই বোঝা যাবে তাঁরা ইরানের সমর্থনে বক্তব্য রেখে মোবাইল স্ক্রিন ফাটিয়ে দিচ্ছে। ইজরায়েলের তেল আভিভে ইরানের একটি ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়ার খবর বা ভিডিও আসতেই বাংলাদেশিরা কমেন্টে ভরিয়ে দিচ্ছেন। অথচ বাংলাদেশে ইরানের সপক্ষে কোনও মিছিল বা ইজরায়েলের বিপক্ষে কোনও বিক্ষোভ নজরে আসছে না। যেখানে ইজরায়েল গাজা আক্রমণ করায় এবং গাজা কার্যত গুঁড়িয়ে দেওয়া নিয়ে ঢাকায় “মার্চ ফর গাজা” কর্মসূচি আমরা দেখেছি। যা ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধে দেখা যাচ্ছে না। কেন এমনটা হল? ইরানও তো পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মতো একটা মুসলিম দেশ। তাঁদের গণশত্রু ইহুদি রাষ্ট্র ইজরায়েল একের পর এক আক্রমণ করে ইরানের রাজধানী তেহরান কার্যত গুঁড়িয়ে দিয়েছে। চরম ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে ইরান। এমনকি সেখানে সরকারের পতনও হতে পারে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা। এখন প্রশ্ন হল, এমনকি পরিস্থিতি হল, যে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারপক্ষ একটাও মন্তব্য করছে না ইজরায়েলের বিরুদ্ধে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের পতন হলে কপালে দুঃখ আছে বাংলাদেশের।
এখনও সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামেনি। তবে তাঁরা ইজরায়েলকে মদত দিয়ে চলেছে এখনও। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প ক্রমাগত ইরানের প্রধান ধর্মীয় গুরু আয়াতুল্লাহ খামেনিকে হুমকি দিয়ে চলেছেন। এও জানা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র চাইছে খামেনির পতন হোক, ইরানে পালাবদল হোক। ইজরায়েলও একপ্রকার তাই ঘোষণা করেছে। ফলে সকলেরই নজর এখন সেই দিকে। ইরানে খামেনির পতন হলে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বে চিন ও পাকিস্তান। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান তথা ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। জানা যাচ্ছে, তাঁকে ব্যবহার করেই ইরানে রাজনৈতিক পালাবদল করতে চাইছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর পিছনে অনেক অঙ্ক কাজ করছে। আয়াতুল্লাহ খামেনি একদিকে যেমন চিন ও রাশিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ট। অন্যদিকে ভারতেরও বন্ধু। যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ক্ষতিকর বলেই মনে করছেন ট্রাম্প। ইরান থেকে ঘুরপথে এবং সোজাপথে বিপুল পরিমান তেল কেনে বেজিং। চিনের আমদানিকৃত তেলের প্রায় ৮০ শতাংশই আসে ইরান থেকে। ফলে খামেনির পতন হলে চিনের অর্থনীতি একেবারে ধ্বসে যাবে। আর এটা হলে, বাংলাদেশও বিপদে পড়বে, কারণ সে দেশের অর্থনীতিও এই মুহূর্তে অনেকটা চিন নির্ভর। আবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই মুহূর্তে অনেকটাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকে আছে। তাই সরকারপন্থী দলবল ইরানে ইজরায়েলের হানা নিয়ে মুখ খুলতে ভয়. পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনার সুবিধাই হবে বলে মনে করছেন অনেকে।
এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের গুপ্তচর সংস্থা র-এর সম্পর্ক খুব ভালো। তেমনই ইজরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের সম্পর্কও ভালো। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ দাবি করছে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে এই দুই দেশের গুপ্তচরাই সক্রিয়। এমনকি তাঁরা বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের মধ্যেও নিজেদের কর্তত্ব বিস্তার করে ফেলেছে। র ও মোসাদের এজেন্টরা বিএনপির মধ্যেও ঢুকে আছে। ফলে বাংলাদেশে খুব শীঘ্রই বড় কিছু একটা ঘটবে। শেখ হাসিনার কাছেও সেই বার্তা পৌঁছে গিয়েছে। অপরদিকে, সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদির যে টেলিফোনে কথোপকথন হয়েছে তাতেও বাংলাদেশের প্রসঙ্গ উঠে এসেছিল। জানা যাচ্ছে, মোদি বাংলাদেশে যে সন্ত্রাসী পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে সে সম্পর্কে ট্রাম্পকে সবিস্তারে জানিয়ে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে এও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ভারতের সাম্প্রতিক অবস্থান কি। ফলে ট্রাম্পও এবার বাংলাদেশ নিয়ে পিছু হটতে বাধ্য হবেন। তাই শেখ হাসিনার বাংলাদেশে ঢোকা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। ইতিমধ্যেই বহু আওয়ামী নেতা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ের তোড়জোর শুরু করেছেন বলেও জানা যাচ্ছে।
Discussion about this post