পর্দার আড়ালে অনেক খেলা হচ্ছে বাংলাদেশে। আর পরিস্থিতি এত দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে যে কখন কি হবে, সেটাই এখন বলা মুশকিল। তবে যে টুকু জানা যাচ্ছে, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের মাস্টারপ্ল্যান এবার প্রয়োগ হতে শুরু করেছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের সেনাপ্রধান তাঁর কাজ শুরু করেছেন। গোপন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ওয়াকার-উজ-জামান বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে সেনাবিদ্রোহ করার অন্যতম কুচক্রী লেফটানান্ট জেনারেল ফাইজুর রহমানকে গ্রেফতার করেছেন। আরও কয়েকজন আটক হতে পারে বলেও খবর। অন্যদিকে, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান যতদিন মধ্য আফ্রিকা সফরে ছিলেন, ততদিন ভারতের চারজন প্রতিনিধি অতি গোপনে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করেছিলেন বলেও জানা যাচ্ছে। এই চারজনই উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী। সূত্রের খবর, একজন ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় সেনাকর্তা এবং একজন ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর ডেপুটি ডিরেক্টর পদে রয়েছেন। বাকি দুজনের পরিচয় গোপন রয়েছে। কেন তাঁরা চারদিন ঢাকায় অবস্থান করলেন, কেন তাঁরা বাংলাদেশের সরকারি কোনও কর্তার সঙ্গে বৈঠক করলেন না, সেটা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। তবে কি শেখ হাসিনাকে ফেরানোর প্রস্তুতি শুরু করে দিল ভারত? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ভারতীয় গণমাধ্যমে।
মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি নোবেলজয়ী অর্থনীতির অধ্যাপক, গবেষক। যার বিশ্বজোড়া খ্যাতি, তিনি বিশ্ব শান্তির জন্য নোবেল সম্মান পেয়েছিলেন। সেই অধ্যাপক ইউনূসই এবার চরম লজ্জার মুখে পড়তে পারেন। খুব শীঘ্রই তাঁকে পদ থেকে টেনে নামানো হতে পারে বলেই জানা যাচ্ছে গোপন সূত্রে। বর্তমানে বাংলাদেশের তদারকি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে রয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস। সাত মাসের বেশি সময় হতে চলল তিনি সর্বোচ্চ ক্ষমতায় বসেছেন, কিন্তু বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। তাঁর ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষদের উপর নেমে এসেছে নির্মম অত্যাচার। প্রথমে তা অপপ্রচার বলে দায় ঠেলার চেষ্টা হলেও কালক্রমে গোটা বিশ্বের সামনেই চলে এসেছে সেই সত্য, এমনকি মুহাম্মদ ইউনূসও কিছুটা স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। অথচ এই মানুষটাই গত বছরের ৭ আগস্ট ফ্রান্সের প্যারিস শহর থেকে বাংলাদেশের ঢাকায় অবতরণ করে কি বলেছিলেন, সেটা গোটা বিশ্বের মানুষ শুনেছিলেন।
শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে প্রধান উপদেষ্টার পদে বসেই মুহাম্মদ ইউনূসের বলা এই কথাগুলি যে কতটা মিথ্যে ছিল, সেটা বোঝা গেল ছয়মাসের মধ্যেই। তাঁর আমলে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্য। তিনি ক্ষমতায় এসেই জামাত শিবিরের কথা মতো একে একে শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের জেল থেকে ছেড়ে দিলেন। বহু জঙ্গি ও খুনের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামী জেল ভেঙে পালিয়ে গেলেন, অথচ মুহাম্মদ ইউনূসের তদারকি সরকার তাঁদের ধরার চেষ্টাই করলেন না। ফলে ধীরে ধীরে বাংলাদেশে বেড়ে গেল মব কালচার। অর্থাৎ, জনতাই আইন হাতে তুলে নিতে শুরু করল। এ জনতা যে সে জনতা নয়, রীতিমতো তৌহিদী জনতা। যারা ধর্মরক্ষার নামে যখন তখন রাস্তাঘাটে গণধোলাই দিতে শুরু করলেন। কিন্তু ইউনূসের পুলিশ-প্রশাসন কিছুই বলল না। আবার হিন্দু বা খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষজনের উপর নেমে এল অকথ্য অত্যাচার। ইউনূস ও তাঁর সরকার দেখেও মুখ ফিরিয়ে নিল। অথচ এক হিন্দু সন্নাসী এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই ফুঁসে উঠলেন ইউনূস, শান্তির জন্য নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। সেই সন্নাসীকে বিনা বিচারে, মিথ্যা মামলায় দিনের পর দিন জেলে রাখার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। সাড়া বিশ্ব ছিঃ ছিঃ করলেও তিনি আদতে জামায়তে ইসলামের নেতাদের মুখের ওপর কথা বলতে পারছেন না, বা কথা বলছেন না। এবার তাঁর মুখোশ খুলতে চলেছে। আর তা খুলবেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে এসে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে ভারত সরকার খুব একটা বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলায়নি। তবে কেন্দ্রীয় সরকার শেখ হাসিনাকে যে আশ্রয় দিয়েছে, সেটা অকপটে স্বীকার করেছে। বাংলাদেশের তরফে বহুবার সরকারি ও মৌখিকভাবে হাসিনার প্রত্যর্পণ চাওয়া হয়েছে। কিন্তু ভারত কোনওভাবেই তার জবাব দেয়নি। কিন্তু সরকারিভাবে ভারত বহুবার সে দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার বন্ধ করার আর্জি জানিয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের বার্তা দিয়েছিল। এমনকি যে সমস্ত জঙ্গি নেতারা জেল থেকে ছাড়া পেয়েছিল, ভারত তারও প্রতিবাদ জানিয়েছিল। ভারতের বিদেশমন্ত্রক ঘুরিয়ে মুহাম্মদ ইউনূসকে এই দুটি বিষয়ে বারবার সতর্ক করেছিল। কিন্তু মুহাম্মদ ইউনূস তা কানেই নেননি। বরং উল্টে বহুবার ভারতকে আক্রমণ করেছেন, প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছেন। ভারতের সেভেন সিস্টার্স বা উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যকে নিয়ে ভারতকে সতর্ক করে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। যা মোটেই ভালোভাবে নেয়নি ভারত সরকার।
ফলে তখন থেকেই হাসিনাকে স্বমহিমায় দেশে ফেরানো এবং মুহাম্মদ ইউনূসকে বাগে আনার পরিকল্পনা হয়। আর এই দায়িত্ব বর্তায় ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তথা ভারতের জেমস বন্ড অজিত ডোভালের কাঁধে। জানা গিয়েছে, তিনিও থ্রি-পয়েন্ট মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছেন। এবং এবার সেটা প্রয়োগও করা শুরু করেছেন। বাংলাদেশের সেনাপ্রধানকে গ্রেফতার বা মেরে ফেলার চক্রান্ত ফাঁস করে একদিকে যেমন তাঁকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। তেমনই তাঁর অবর্তমানে ঢাকায় উপস্থিত ছিলেন চারজন রহস্যজনক ভারতীয় কর্মকর্তা। সামরিক বিশেষজ্ঞদের অনুমান, এই চারজন গিয়েছিলেন, শেখ হাসিনার জন্য ঢাকায় একটা উপযুক্ত বাসা খোঁজার জন্য। খুব শীঘ্রই হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরাবে ভারত, আর তাঁর নিরাপত্তা যাতে অটুট থাকে তাই ঢাকা শহরে একটা উপযুক্ত বাসা প্রয়োজন। যেখানে হাসিনার উপর সহজে হামলা করা সম্ভব হবে না। পাশাপাশি জানা যাচ্ছে তাঁরা অতি গোপনে ঢাকার পুরোনো বিমানবন্দর বা তেজগাঁও সামরিক বিমানঘাঁটিও পরিদর্শন করে এসেছেন। সেনাপ্রধানের বিমান সেখানে অবতরণ করিয়ে একটা মহড়াও দেওয়া হয়েছে। যাতে শেখ হাসিনার বিমান নিরাপদে তেজগাঁও বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারে। ফলে যে কোনও দিন টুক করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়বেন শেখ হাসিনা। ঠিক যেমনটা তিনি দাবি করেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। আর রইল মুহাম্মদ ইউনূস। সম্ভবত তাঁকে পালানোর আর কোনও সুযোগ দেওয়া হবে না। খুব শীঘ্রই তাঁকে গ্রেফতার করা হবে। কারণ, তিনি বিগত সাত মাসে যা যা করেছেন, তাঁর এক একটা করে হিসেব বুঝে নেবেন শেখ হাসিনা।
Discussion about this post