বেশিদিন আগের কথা নয়, গত নভেম্বর মাসের শেষের দিকে জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবিরের ১০ জন নেতাসহ আরও ৪টি ইসলামি দলের একটি প্রতিনিধিদল চিন সফরে গিয়েছিলেন। ১৪ সদস্যের ওই দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের। সেই সময় জামাত নেতাদের চিন সফর ঘিরে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছিল রাজনৈতিক মহলে। বিশেষ করে চিনের ক্ষমতাসীন দল কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে মুসলিম সংগঠনগুলির এই সফর বেশ বিরল নজির। কারণ জামায়াত-সহ কোনও ইসলামি দলের নেতাদের চিনের ক্ষমতাসীন দলের আমন্ত্রণে সে দেশে যাওয়ার ঘটনা সেটাই ছিল প্রথম। এর পরও বেশ কয়েকবার জামাত নেতাদের চিনে যেতে দেখা গিয়েছে। বাংলাদেশের কট্টরপন্থী ইসলামী নেতাদের কেন এত ঘনঘন চিন সফর তা নিয়ে কৌতূহল হয় বৈকি। বিশেষ করে জামাতের মতো কট্টরপন্থী ইসলামী সংগঠনগুলি অতি মাত্রায় ভারতবিরোধী মনোভাব নিয়ে চলে। সম্প্রতি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি যে রিপোর্ট দিয়েছে, তাতেই বোঝা যাচ্ছে, জামায়তে ইসলামীর কেন এত চিন প্রীতি।
সূত্রের খবর, চিন বাংলাদেশের জামায়তে ইসলামীর তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন কট্টরপন্থী জঙ্গি সংগঠন ও রোহিঙ্গা জঙ্গিদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। যা অতি গোপনে চলছে চিনের ভুখন্ডেই। অর্থাৎ, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের অস্থিরতা ব্যবহার করে চিন ভারতকে অস্থিতিশীল করার পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা সেরে রেখেছে। আর এর জন্য তাঁদের এত জামাত প্রীতি। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এমনই যে ভারতের ওপর পূর্ণ নজরদারি চালাতে এবং ভারতকে, বিশেষ করে উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাতটা রাজ্যকে অস্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশের ভুখন্ড অতি সহজে ব্যবহার করা যায়। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চার হাজার কিলোমিটারের বেশি সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক কারণে প্রায় হাজার কিলোমিটার সীমানা কাঁটাতারের বেড়া নেই। ফলে ভারতের মূল ভুখন্ডে জঙ্গি কার্যকলাপ ছড়িয়ে দিতে যেমন পশ্চিমবঙ্গকে ব্যবহার করা যাবে, তেমনই সেভেন সিস্টার্সকে অশান্ত রাখতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ব্যবহার করা যাবে।
ভারতীয় গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে, মুহাম্মদ ইউনূসের আমলে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই বাংলাদেশে অতি সক্রিয়। তাঁরা মূলত চট্টগ্রাম, কক্সবাজারে অবস্থিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলি থেকে যুবকদের বাছাই করে এবং মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জঙ্গিদের নিয়ে একটা ইসলামী সৈন্যবাহিনী তৈরির চেষ্টায় ছিল। পাকিস্তানের মধ্যস্থতায় চিন ওই জঙ্গিদের গোপনে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে তাঁদের মাটিতে। যাতে ওই জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরগুলিকে ভারতীয় সেনা সহজে টার্গেট করতে না পারে। যদিও এই খবর পাওয়া মাত্রই ভারত সতর্ক হয়ে গিয়েছে। মূলত মিয়ানমার ও চিন সীমান্তে অতিরিক্ত নজরদারি করছে বিএসএফ ও ভারতীয় সেনা।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ভারতের অরুণাচল প্রদেশ ও আসামের কিছু অংশের দিকে চীনের বরাবরই নজর রয়েছে। শি জিনপিং প্রশাসন বেশ কয়েকবার অরুণাচলের ওই অংশগুলিকে নিজেদের বলে দাবি করেছে। তবে ভারত সরকারও এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং কূটনৈতিক স্তরে এর প্রতিকারও করেছে। হলে চীন চাইছে ভারতের উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্যে নিজেদের কর্তৃত্ব কায়েম রাখতে। বাংলাদেশের তদারকি সরকারও এই সরকারের নেপথ্যে থাকা কট্টরপন্থী মুসলিম সংগঠনগুলিও ভারতের উত্তর-পূর্বকে অশান্ত রাখতে চাইছে। ফলে দুই দেশের লক্ষ্য প্রায় মিলে যাওয়ায় দুয়ে দুয়ে চার হতে সময় লাগেনি। মিয়ানমার এবং চিনের গোপন ঘাঁটিতে এখন প্রশিক্ষণ নিচ্ছে জামাত, হিজবুত, হুজি, জেএমবি ও রোহিঙ্গা জঙ্গিরা। ভারতও চুপ করে বসে নেই। জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ইতিমধ্যেই ১২ জনের বেশি সেনাকর্তা এবং প্রাক্তন সেনাকর্তাকে নজরবন্দি বা গৃহবন্দি করেছে। যারা মূলত বাংলাদেশ সেনার অন্দরে থেকে জামাত, হিজবুত এবং পাকিস্তানের কথায় কাজকর্ম করছিল। ফলে এই ষড়যন্ত্রকারী শিবিরকে প্রতিহত করে পাকিস্তান-চিনের কৌশলকে মোকাবিলা করার নীতি যে ভারতেরই এটা অনেকেই মনে করছেন।
Discussion about this post