বাংলাদেশে যেন মব থামানোয় যাচ্ছে না। মব থামানোর জন্য নির্দেশ রয়েছে, কিন্তু কার্যকলাপ দেখা যাচ্ছে না। মব আতঙ্ক যেন গ্রাস করছে বাংলাদেশের মানুষকে। মানুষ রাস্তাতে বেরোতে ভয় পাচ্ছেন। আসলে মদত আসছে কোথা থেকে? সেনাবাহিনীকে মদত দিচ্ছে কারা? পুলিশই বা কি করছে? সামনে এল চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট।
তথ্য বলছে, গত ১০ মাসে মব ও গণপিটুনিতে ১৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। একইসঙ্গে ৪৭৭ টি হামলার শিকার হয়েছে পুলিশ। সম্প্রতি সাবেক নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার উপর যে মব চালানো হয়েছে, তাতে সেনাবাহিনীর তরফ থেকে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের তরফ থেকে ছয় জনকে আসামী করা হয়েছিল। গ্রেফতার একজন এবং আরও দুই জন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। এরমধ্যে গ্রেফতার ব্যক্তিকে জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত। মব করে গ্রেফতার, তারপর জামিন, এই ঘটনায় মব করতে আরও উৎসাহ হবে কিনা, সেই প্রশ্ন উঠছে বাংলাদেশে। পাশাপাশি কেন মব কে ঠেকানো যাচ্ছে না, সেই প্রশ্নও উঠছে।
মব কালচার ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বাংলাদেশে। সম্প্রতি খুলনাতে দেখা গিয়েছে, এক পুলিশ অফিসারকে গণধোলাই দেওয়া হয়েছে। তারপর তাকে থানায় দেওয়া হয়েছে। ফলে পুলিশের উপর আক্রমণ একদমই থামেনি। অনেকে বলছেন, সরকার বিজ্ঞপ্তি এবং ঘোষণা করার পরও মব কালচার অব্যাহত বাংলাদেশে। এমনকি মবের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী কঠোর হুশিয়ারি দিলেও পুলিশ আধিকারিকরা মনের শিকার হচ্ছেন। এমনকি যে ঘটনাগুলি সামনে আসছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, কে ভিডিও করবেন, কারা স্লোগান দেবেন, কারা মব করবেন, সব যেন পরিকল্পিত। এমনকি বিভিন্ন রিপোর্টে বলা হচ্ছে, এটি একটি ব্যাধির মত। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে, নির্মূল করা যাবে না। কে এম নুরুল হুদার উপর মব চালানো নিয়ে কয়েকজনকে শনাক্ত করা গিয়েছে। তারমধ্যে ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। তারমধ্যে একজনকে গ্রেফতার করেছে সেনাবাহিনী। যদিও আদালতে গিয়ে জামিন পেয়ে যায় তিন জন। এখানে আদালতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আদালতকে কোনও ভাবে সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে না তো? উঠে আসছে প্রশ্ন। তবে বিএনপি’র বিরুদ্ধে যখন মবের অভিযোগ উঠছে, তখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলছেন, মব জাস্টিস একটি হিংস্র উন্মাদনা। তিনি যখন এই মন্তব্য করছেন, তখন প্রশ্ন উঠছে, বিএনপি নেতারা মবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও, তারা তৃণমূল স্তরে মব নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। গত বছর 11 সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। আইন নিজের হাতে তুলে বিশৃঙ্খল সৃষ্টি করবেন না। তাহলে তাকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে। কিন্তু আদৌ কি শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে কাউকে? উঠছে প্রশ্ন। এদিকে মানবাধিকার সংগঠক নুর খান লিটন বলেছেন, গত ৫ই আগস্টের পরে মানুষের আকাঙ্খা ছিল, ন্যায্য শাসন দেখবে। অরাজকতা থাকবে না। কোনও বিশৃঙ্খল থাকবে না। কিন্তু ১০ মাসে এসেও মানুষকে নির্যাতন করা হচ্ছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, পুলিশের উপস্থিতিতে মব হলে সেখানে তো আইনের শাসন নেই, সেটাই বোঝা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কেন পুলিশ কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে না যেমন প্রশ্ন উঠছে, তেমন আইন শাসন ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে বাংলাদেশে।
Discussion about this post