অনুরাকুমার দেশনায়কে, শ্রীলঙ্কার নতু প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন ২৩ সেপ্টেম্বর, সোমবার। আর একদিনের মধ্যেই তিনি ভারতের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। বামপন্থী ঘরানার এই রাজনীতিবিদ চিনপন্থী বলেই পরিচিত। শ্রীলঙ্কার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়া ভারতের কাছে ভূমিকম্পের থেকে কিছু কম নয় বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। এর মূল কারণ হিসেবে উঠে আসছে, একজন মার্কসবাদী-লেলিনবাদী দলকে তিনি শ্রীলঙ্কায় প্রথমবার ক্ষমতায় নিয়ে এসেছেন। শুধু তাই নয়, শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর তাঁর একটি মন্তব্য ভারতের পক্ষে যথেষ্ট চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সোমবারই তিনি বলেছেন, “আমরা স্যান্ডউইচ হতে চাই না। বিশেষত চিন এবং ভারতের মধ্যে”। তাঁর এই মন্তব্যের মধ্যেই সিঁদূরে মেঘ দেখছেন ভারতের কূটনৈতিক মহল।
এমনিতেই ভারতের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক এখন সাপে-নেউলের মতো। সেই সঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক বরাবরই ভালো। শেখ হাসিনার পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের বাংলাদেশ আবার পাকিস্তান ও চিনের দিকে ঝূঁকছে। এবার তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হতে চলেছে শ্রীলঙ্কাও। গত রবিবার চিনপন্থী বামপন্থী নেতা অনুরাকুমার দেশনায়কে শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। শ্রীলঙ্কার বামপন্থী জোট পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট বা জেভিপি-র নেতা দেশনায়কে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন। তিনি ৪২.৩১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। তাঁর অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমসিংঘে পেয়েছেন মাত্র ১৭.২৭ শতাংশ ভোট। পাশাপাশি তিনি পরাজিত করেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মাহিন্দা রাজাপাকসের ছেলে নামাল রাজাপাকসের মতো বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট প্রার্থীকে। যা ভারতের প্রতিবেশী ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। উল্লেখ্য ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় গোটাবায়া রাজাপাকসেকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য গণবিক্ষোভের পর এই নির্বাচন হয়।
শ্রীলঙ্কার বর্তমান প্রেসিডেন্ট দেশনায়কে, যিনি একেডি নামে পরিচিত। যার দল পূর্বে ভারত বিরোধী মনোভাবের জন্য পরিচিত। ফলে এই একেডি যে ভারত মহাসারগরীয় অঞ্চলে নয়া দিল্লির স্বার্থরক্ষার জন্য ভালো হবে না এটাই স্বাভাবিক। কারণ চিনপন্থী এই নেতা আগামীদিনে চিনের প্রতি আনুগত্য দেখালে ভারতের কাছে তা খুব কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করবে এটা বলাই বাহুল্য। দেশনায়কে অনেকটা বাংলাদেশের মতোই আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে উঠে এসেছেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি শ্রীলঙ্কার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজেকে পদপ্রার্থী ঘোষণা করেছিলেন। এবং লাগাতার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে শ্রীলঙ্কায় গণঅভ্যুত্থানে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। যদিও দেশনায়কে এই আন্দোলনে নিজের কৃতিত্ব অস্বীকার করেছিলেন। শ্রীলঙ্কার জনগণকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে তিনি বহিরাগত, তিনি এই আন্দোলনকে শুধুমাত্র সমর্থন করছেন। তিনিও সকলের মতো চান শ্রীলঙ্কার আমূল পরিবর্তন হোক।
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে দেশনায়কে নিজেকে একজন দুর্নীতিবিরোধী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। পাশাপাশি ভারতের প্রতিবেশী এই দ্বীপরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক ত্রাণ নিয়ে আনার ব্যপারে জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ-এর বেলআউটের শর্তাদি পুনরায় আলোচনা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কা যখন সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল, তখনই দেশনায়কে দ্বীপবাসীকে আশার আলো দেখিয়েছিলেন। এবার তিনিই ভারতের কাছে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এর মূল কারণ, শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোট বন্দরকে চিনের কাছে লিজ দেওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই টানাপোড়েন চলছিল। এবার দেশনায়কের এই জয় নরেন্দ্র মোদির কাছে যথেষ্টই মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
এই মুহূর্তে ভারতের প্রতিবেশী দেশসমূহ নিয়ে এমনিতেই চিন্তায় ভারত। বিশেষ করে নেপালে এই মুহূর্তে কমিউনিস্ট শাসক, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে ইসলামপন্থী সামরিক-সমর্থিত শাসক, মালদ্বীপেও এই মুহূর্তে চিনপন্থী ইসলামিক শাসক রয়েছেন। আবার মিয়ানমারে মার্কিন সামরিক সহায়তায় শাসক রয়েছেন। ফলে সবমিলিয়ে এখন প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে ভারতকে নতুন করে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করতে হবে। যা এই মুহূর্তে খুবই চ্যালেঞ্জিং কাজ নরেন্দ্র মোদির সামনে।
Discussion about this post