বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচারপর্ব শুরু হয়ে গেল রবিবার থেকে। তাঁরই হাতে গঠিত ঢাকায় আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে এই বিচারপর্ব শুরু হয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত বছরের জুলাই-অগস্টের গণআন্দোলনে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগ দাখিল হয়েছে এই আদালতে। তার ভিত্তিতেই “পলাতক” হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। পাশাপাশি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে বাংলাদেশের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধেও।
শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে আছেন। দেশে নেই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও। ফলে তাঁদের অনুপস্থিতিতেই রবিবার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তদন্ত রিপোর্ট পড়ে শোনান চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। আর এই বিচার প্রক্রিয়া সরাসরি বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং ট্রাইব্যুনালের ফেসবুক ও ইউটিউবে সম্প্রচারিত হয়েছে। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবার ঘটল। সবমিলিয়ে অনেকটাই ঢাক-ঢোল পিটিয়ে শেখ হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-সহ আরও চার জনের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা দায়ের হয়েছিল। এরমধ্যে পাঁচটি অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১২ মে তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে। বিচারক মহম্মদ গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইবুনাল বেঞ্চে এই মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। এদিন তদন্ত রিপোর্ট পড়ে শোনানোর পর বিচারক হাসিনা-সহ তিনজনকে আগামী ১৬ জুন আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই মতো জারি হয় গ্রেফতারি পরোয়ানা। আদালতে জমা পড়া তদন্ত রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশেই বাংলাদেশে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ ঘটানো হয়েছে। প্রধান সরকারি আইনজীবী মহম্মদ তজুল ইসলাম দাবি করেন, ‘‘হাসিনা গণহত্যা রুখতে ব্যর্থ হয়েছেন। সব ক’টি খুনই পরিকল্পিত। গণআন্দোলনকে দমন করতেই সে সব ঘটানো হয়েছিল’’। এখন দেখার সরকারি তদন্ত রিপোর্টে এ সব দাবি করা হলেও এর সাপক্ষে কতটা তথ্য ও প্রমান দাখিল করতে পারে বাংলাদেশ সরকার।
যদিও এই সমস্ত অভিযোগ ও তদন্তকে সরাসরি খারিজ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লিগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াবদুল কাদের রবিরার এক বিবৃতিতে বলেছেন, সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অবৈধ ফ্যাসিস্ট ও জঙ্গি ইউনূস সরকারের প্রযোজনায় পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লিগ ও বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বিরুদ্ধে বিষোদগার, কুৎসা রটানো এবং অপপ্রচার করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, অবৈধ দখলদার ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই। রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার জন্য এই ইউনূস গংদের কোনও সাংবিধানিক ও নৈতিক ভিত্তি নেই। তাদের জনসমর্থনও শূন্যের কোঠায়। তিনি আরও বলেছেন, বাংলার জনগণ জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তাদের আস্থা পুনর্ব্যক্ত করছে। ফলে এই অবৈধ দখলদার গোষ্ঠীর সবকিছু টালমাটাল হয়ে গেছে। যে কোনও মূল্যে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য একদিকে অযৌক্তিকভাবে বন্ধুপ্রতীম পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বিরোধিতা করছে।
এই মুহূর্তে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধিন তদারকি সরকারের পরিস্থিতি মোটেই সুখকর নয়। বিগত নয় মাসের বেশি সময় তাঁরা বাংলাদেশে ক্ষমতায়, কিন্তু বাংলাদেশের আর্থিক হাল অত্যন্ত বেহাল। শতাধিক কল-কারখানা বন্ধ। হাজারে হাজারে বেকারত্ব। তার ওপর সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরাসরি সংঘাত চলছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। আবার ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়ে বিএনপি-সহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল প্রবল চাপ সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলের মতে, এই সমস্ত দিক থেকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতেই হাসিনার বিচারপর্ব সরাসরি লাইভ টেলিকাস্ট করল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে হাসিনা বিরোধী মনোভাব আবার ফুটে ওঠে। তাই রবিবার হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করে প্রধান সরকারি আইনজীবী বলেন, এই বিচার সম্পন্ন হওয়ার পরই বাংলাদেশের পুনরজ্জীবনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে বলে মনে করি।
তবে সরকারি আইনজীবী যাই বলুক না কেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ফলে প্রবল চাপে পড়ে গিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কারণ, হাসিনা বিরোধী হাওয়া এখন ঘুরে গিয়ে হাসিনার পালেই বইতে শুরু করেছে। বিএনপিও এই বিষয়ে মুহাম্মদ ইউনূসকে চাপ দিতে শুরু করেছে। আর শেখ হাসিনা এখনও ভারতের আশ্রয়ে রয়েছেন। ফলে যতই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হোক, তাঁকে ভারত সহজে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবে না এটা স্পষ্ট। এখন দেখার, বিচারের শেষে কি রায় দেয় আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল।
Discussion about this post