বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের উপর খাঁড়ার ঘা চলছে। মুহাম্মদ ইউনূসের তদারকি সরকার এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বা জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতৃত্ব বারেবারে সংবাদমাধ্যমকে আক্রমণ করছে যখনই তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও খবর প্রচারিত হচ্ছে। সাংবাদিকদের হুমকি, সংবাদমাধ্যমের মালিকপক্ষকে চাপ সৃষ্টি এবং সরাসরি চাকরি ছাঁটাইয়ের মতো ঘটনাও বিগত সাত মাসে সামনে এসেছে। হাসনাত আবদুল্লাহ বা সারজিস আলমদের সরাসরি সংবাদপত্র বা টিভি চ্যানেলের দফতরে গিয়ে হুমকির ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে রয়েছে যে এই মুহূর্তে বাংলাদেশে সরকার বিরোধী কোনও খবর পরিবেশন করার উপায় নেই। তা বলে কি বাংলাদেশের তদারকি সরকার কোনও ভুল করছে না? নাকি জাতীয় নাগরিক পার্টি বা বৈষম্যবিরোধী নেতারা কোনও ভুল করছেন না?
সেটা হলেও বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে সেগুলি প্রচার করা যাবে না। এমনই ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে সে দেশে। অপরদিকে ইউনূসের তদারকি সরকারের একটি প্রেস উইং আছে, যাদের কাজই হল সরকারবিরোধী বা তাঁদের স্বার্থের পরিপন্থী কোনও খবর বা বার্তা দেওয়া হলে সেটা নাকচ করা। একটা ভুঁয়ো ফ্যাক্ট চেকিং সিস্টেমের নামে এটা করা হচ্ছে বলেই অভিযোগ। ঠিক সেখান থেকেই বাংলাদেশে কয়েকজন অকুতোভয় সাংবাদিক ও সমাজকর্মী নিজের উদ্যোগে সোশ্যাল মিডিয়ায় তদারকি সরকারের উপদেষ্টাগণ এবং প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ভুলভ্রান্তি ধরিয়ে চলেছেন। এমনকি তাঁরা কোনও কোনও সময় ইউনূসের মুখোশ পর্যন্ত খুলে দিচ্ছেন। ফলে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে তাঁরা এখন রিয়েল হিরো।
বেশ কয়েকজনের নাম সামনে আনা যায়। যারা সোশ্যাল মিডিয়ায়, বিশেষ করে ইউটিউবে নিয়মিত ভিডিও আপলোড করে সরকারের সমালোচনা করছেন। আবার বর্তমানে প্রবল ক্ষমতাশালী ছাত্রনেতাদের সমালোচনা করতেও পিছপা হচ্ছেন না। তাঁদের মধ্যে অন্যতম বর্ষীয়ান সাংবাদিক মাসুদ কামাল, সাজ্জাদ কাদির বা গোলাম মাওলা রনি। এছাড়াও বলা যায় আইনজীবী ফজলুর রহমান ও আইনজীবী জেড আই খান পান্নার নাম। এরা দীর্ঘদিন ধরেই তদারকি সরকার বা তাঁর নেপথ্যে থাকা চক্রান্তকারীদের মুখোশ টেনে খুলে দেওয়ার কাজ করে চলেছেন। তাঁরা নির্ভিক সাংবাদিকতার পরিচয় দিয়ে যেমন মুহাম্মদ ইউনূস বা ছাত্রনেতাদের সমালোচনা করছেন, তেমনই বিএনপি, জামাত কিনবা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কাজকর্মের সমালোচনাও করছেন নিয়মিত। তাঁরা যেমন সেনাবাহিনী ও পুলিশ-প্রশাসনের সমালোচনা করছেন, তেমনই বাংলাদেশের মব জাস্টিস নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন। ফলে প্রকৃত ঘটনা জানতে এবং ঘটনার নেপথ্যে থাকা আসল সত্যিটা জানতে বর্ষীয়ান সাংবাদিক মাসুদ কামাল, সাজ্জাদ কাদির বা গোলাম মাওলা রনির ভিডিও দেখছেন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ। কমেন্টে অনেকেই তাঁদের বাংলাদেশের আসল হিরো বলে সংবোধন করছেন।
মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপি চেয়ারপারসনের বর্তমান উপদেষ্টা আইনজীবী ফজলুর রহমান এক সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সেক্রেটারি ও সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। জনপ্রিয় বক্তা হিসেবে সব মহলে পরিচিত। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে অবহেলার শিকার হয়ে পরবর্তীতে বিএনপিতে যোগ দিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা সভাপতি পদ পান। এই বর্ষীয়ান আইনজীবী বিগত কয়েকদিন ধরেই নানা টেলিভিশন টক শো বা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে মুহাম্মদ ইউনূস সরকারকে তুলোধনা করছেন। রীতিমতো তথ্য দিয়ে, যুক্তি সাজিয়ে তিনি তা করছেন। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা আরও বেড়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপার্সন জহিরুল ইসলাম খান তথা জেড আই খান পান্না একজন সুপ্রিম কোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী। তাঁর বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে মামলা দায়ের করে তাঁকে অপদস্থ করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু দূঁদে আইনজীবী পান্না তা নিরস্ত্র করেন। ওই মামলা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে তদারকি সরকার। পরে তাঁরা নিজেদের ভুল স্বীকারও করে নেয় আদালতে। বর্ষীয়ান আইনজীবী জেড আই খান পান্না ইসকনের সন্নাসী চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুর হয়েও লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। মূলত তাঁরই জন্য পরবর্তীতে চিন্ময় কৃষ্ণের হয়ে অনেক আইনজীবী সাওয়াল করতে এগিয়ে আসেন। ফলে ইউনূসের আমলে অন্যায়কে অন্যায় বলতে পারার সাহসিকতা তাঁকে বাংলাদেশের জনমানসে রিয়েল হিরো হিসেবে প্রতিস্থাপন করেছে।
একই ভাবে সাংবাদিক মাসুদ কামাল, সাজ্জাদ কাদির বা গোলাম মাওলা রনি নানা ভাবে সত্যিটা তুলে ধরছেন সমাজমাধ্যমে। তাঁরা বর্ষীয়ান সাংবাদিক হলেও এই মুহূর্তে কোনও কাজ পাচ্ছেন না। ফলে সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করেই তাঁরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তদারকি সরকার এবং মুহাম্মদ ইউনূস-সহ উপদেষ্টারা যখন মিথ্যা রটনা করছেন, তখন যুক্তি ও তথ্য দিয়ে তাঁদের ভুল চোখে আঙুল দিয়ে ধরিয়ে দিচ্ছেন এই বর্ষীয়ান সাংবাদিকরা। আর এই কাজ করতে গিয়ে তাঁরা যেমন হুমকি পাচ্ছেন তেমনই নানাভাবে হেনস্থা হতে হচ্ছে। তবুও তাঁরা নির্ভিক ও নির্লিপ্তভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। বাংলাদেশের সাধারণ জনগনের মনের কথা তুলে ধরছেন।
Discussion about this post