বাবা বড়কাছারী, নামটা শুনলেই আজও গাঁয়ে কাঁটা দেয়। তবে এই মন্দিরের নাম শুনলেই সবার আগে মনে পরে বাতাসার কথা। কারণ, বাবা বড়কাছারির সঙ্গে অতপ্রতভাবে জড়িয়ে রয়েছে বাতাসা। চিরাচরিত প্রথা অনুয়ায়ী, আজও এই মন্দিরে ভক্তদের মনস্কামনা পূরণ হলে তাঁরা বাবা বড়কাছারীকে নিজের সন্তানের ওজনে বাতাসা দিয়ে পুজো দেন। আবার কেউ কেউ মাটির গোপাল দিয়েও পুজো দিয়ে থকেন। শুধু তাই নয়, চাকরি, বিবাহ থেকে মামলা মর্কদমা, মনস্কামনা পূরণ হলে অনেকেই মাটির সখী মুর্তি দিয়ে পুজো দেন এই মন্দিরে। তবে জানেন বিকেল পাঁচট বাজলেই বন্ধ হয়ে যায় মন্দিরের প্রবেশ পথ। কেন ? কী সেই রহস্য ? এই প্রতিবেদনে জানাবো সেই কাহিনী ।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩০ কিলো মিটার দূরে দঃ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর থানার অন্তর্গত, কুরবেড়িয়া গ্রাম। যে রাস্তাটি বেহালা বাজার থেকে ডানদিক হয়ে বাখরাহাট রোড ধরে সোজা চলে গেছে এই ঝিকুড়বেড়িয়া গ্রামে। ছোট এই গ্রামটিতে বাস করে হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি পরিবার। এই গ্রামেই বিরাজমান বাবা বড়কাছারি। কথিত আছে, ১৯৪০ সালে নবাব আলিবর্দী খাঁ-এর শাসনকালে, বাংলায় মারাঠা আক্রমণ করলে, হিন্দু কৃষক সম্প্রদায়ের মানুষরা এইখানে শ্মশান লাগোয়া জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। সেই সময় ভূতনাথের বরপ্রাপ্ত এক সাধু এই জঙ্গলে বসে স্থানীয়দের সুবিধা অসুবিধা দেখা ভাল করতেন। পরবর্তীকালে ভূতনাথের বরপ্রাপ্ত এই সাধুর মৃত্যু হয়। তখন ভক্তরা সাধুর নিথরদেহ না পুড়িয়ে, ওই শ্মশানে সমাধিস্থ করেন। লোক মুখে শোনা যায়, পরে সেই সমাধিক্ষেত্র থেকে একটি অশ্বত্থ গাছ জন্ম নেয়। তারপর থেকে স্থানীয়রা ওই অশ্বত্থ গাছকে সাধুর প্রতিমূর্তি হিসাবে মান্য করতে থাকেন। শুধু তাই নয়, পরবর্তীকালে, এই বৃক্ষতলে পুজার্চনার স্থানে স্থাপিত করা হয় শিবলিঙ্গের।
তবে জানেন, গাছটির সামনে দাঁড়িয়ে হোক কিংবা ভগবানকে উৎসর্গ করে লেখা চিরকুটে। নিজের মনস্কামনার কথা জানালে গাছটি আশ্চর্যজনক ভাবে তা পূরণ করে, এমনই বিশ্বাস স্থানীয়দের। তবে সূর্যস্ত হলেই গাঢ় অন্ধকারে ঢেকে যায় সমগ্র মন্দির চত্বরে। তারপর আরতির শেষে ভক্তদের জন্য মন্দির বন্ধ হয়ে যায়। এরপর রাত গভীর হলেই মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে ভেসে আসে চন্দনের গন্ধের সঙ্গে গুড়গুড়ির শব্দও। অনেকের মতে, বাবা বড়কাছারি এখানে উপ-দেবতা। ভক্তদের মনস্কামনার বার্তা পড়তেই মন্দিরে ঘুরে বেড়ান তিনি। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার ধুমধাম করে পুজো হয়। এমনকি বহু দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন নিজের মনস্কামনা নিয়ে পুজো দিতে। কেউ পুকুরে স্নানেন পর দন্ডি কেটে মন্দিরে যান তো কেউ আবার পায়ে হেঁটে। তবে লৌকিক হোক কিংবা আলৌকিক, রহস্যে ঘেরা বড়কাছারি মন্দিরের সামনে দাঁড়ালে আজও গা ছমছম করে ওঠে।।
Discussion about this post