একসময় দেশ থেকে ইংরেজদের তাড়াতে লড়াই করেছিলেন। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াইয়ে নেমে যেমন জেল খেটেছেন তেমনই গুলি খেয়েছিলেন। প্রফুল্ল চন্দ্র সেনের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার ৭৭ বছর পর দাঁড়িয়ে ৯৩ বছরের বৃদ্ধের মনে হচ্ছে তিনি যে দেশ চেয়েছিলেন তা তিনি পাননি। হুগলির পুরশুড়া ব্লকের ভক্তপাড়া এলাকার বাসিন্দা ৯৩ বছরের গোপাল চন্দ্র ভক্ত অবশ্য এবারও লোকসভা ভোট দিতে যাবেন, কিন্তু মনে তাঁর একরাশ হতাশা।
উনিশ শতকে একটা সময় হুগলির পুরশুড়ার ভক্ত পাড়া বিপ্লবীদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। এই এলাকার বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীর নাম হয়তো ইতিহাসের পাতায় লেখা নেই, কিন্তু এলাকাবাসীদের মুখে মুখে তাঁরা আজও স্মরণীয়। কিন্তু তাঁদের অধিকাংশই আজ জীবিত নেই। ৯৩ বছরের গোপাল চন্দ্র ভক্ত কিন্তু আজও বেশ শক্ত সমর্থ। নিজ হাতেই জমিতে সবজি চাষ করেন। আর অবসর সময়ে বাড়ির উঠোনে বসে এলাকার কচিকাঁচাদের সেই ইংরেজ আমলের সংগ্রামের গল্প শোনান। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি তাঁকে আজ খুব কষ্ট দেয়। যিনি কিশোর বয়সে পড়াশোনা ছেড়ে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, তিনিই আজ হতাশ বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখে। চারিদিকে শুধু চুরি, দুর্নীতি, বঞ্চনার খবর, ভোটের নামে রক্ত ঝড়ছে। এই সব দেখেই ৯০ উত্তীর্ণ স্বাধীনতা সংগ্রামীর খেদ, সেই ইংরেজ আমলই ভালো ছিল। পুরশুড়ার ভক্ত পাড়ায় গোপাল চন্দ্র ভক্তের বাড়িতে তিনি ছাড়াও আরও দুজন সদস্য স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েছিলেন। এছাড়া ওই পাড়ার আরও অনেকে মহাত্মা গান্ধীর ডাকে সাড়া দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে ঝাঁপিয়েছিলেন। সেই সময়কার স্মৃতির পাতা হাতড়ে গোপালবাবু শোনালেন বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রফুল্ল চন্দ্র সেনের গল্প। ১৪-১৫ বছর বয়সে তিনি জড়িয়ে পড়েছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামে। প্রফুল্ল চন্দ্র সেন তখন বয়সে তরুণ। তিনি মাঝেমধ্যেই পুরশুড়ায় আসতেন গোপন মিটিং করতে।
মাঝেমধ্যে ইংরেজ পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে এই ধরণের গোপন মিটিং হতো। এরকমই এক মিটিংয়ের কথা জানতে পেরে ইংরেজ পুলিশ অভিযান চালায়, প্রফুল্ল চন্দ্র সেন পালাতে সক্ষম হলেও ধরা পড়ে যান গোপাল চন্দ্র ভক্ত।আজ বয়সের ভাড়ে ন্যুজ হলেও স্বাধীনতা আন্দোলনের সমস্ত স্মৃতিতে একফোঁটা মরচে পড়েনি গোপালবাবুর।
অনেক ঘাম, রক্ত ঝরিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছেন গোপাল চন্দ্র ভক্তের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। কিন্তু বর্তমানে রাজ্যের হতশ্রী হাল দেখে। তাঁর আক্ষেপ, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বেশ কয়েকটি প্রকল্প চালু করেছেন। অনেক বয়স্ক নাগরিক বৃদ্ধ ভাতা পেলেও তিনি আজ পর্যন্ত পাননি। তবে গোপালবাবু কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাধীনতা সংগ্রামী পেনশন পান। ৯৩ বছরের বৃদ্ধ গোপাল চন্দ্র ভক্ত কোনও সাধারণ মানুষ নন, তিনি রীতিমতো স্বাধীনতা সংগ্রামী। তবু আজ পর্যন্ত তাঁর বার্ধক্য ভাতা চালু হয়নি। শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে আবাস যোজনা, রেশন বন্টন থেকে বার্ধক্য ভাতা বঙ্গে সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতির অভিযোগ। আর এই সব দেখেই নবতীপর স্বাধীনতা সংগ্রামীর আক্ষেপ এর থেকে ইংরেজ আমলই ভালো ছিল।
Discussion about this post