বলিউড অভিনেতা থেকে জাতীয় দলের ক্রিকেটার, সবজি বিক্রেতা থেকে সাধারণ গৃহবধু, সমান্য চাকরিজীবী থেকে ফুটপাথের ব্যবসায়ী। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের জেরে এগিয়ে এলেন সকলে, আর তাতেই জীবন ফিরে পেল ২২ মাসের এক ফুটফুটে শিশু। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া একটি শক্তিশালী সামাজিক মাধ্যম হলেও এর খারাপ দিকটি নিয়েই বেশি চর্চা হয়। কিন্তু মাঝেমধ্যেই এই সামাজিক মাধ্যমের কিছু ভালো দিক উঠে আসে। যা নিয়ে সকলেই প্রশংসায় ভরিয়ে দেন। যেমন সম্প্রতি এমন একটি ঘটনা ঘটল যা নিয়ে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া।
২২ মাসের হৃদয়াংশ ভুগছিল এমন এক বিরল জেনেটিক রোগে যার চিকিৎসা খরচ আকাশছোঁয়া বললেও ভুল হবে। এই রোগের চিকিৎসায় প্রয়োজন একটি ইঞ্জেকশন, যার দাম সাড়ে ১৭ কোটি টাকা। এর দাম শুনলেই হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে আসবে অধিকাংশ মানুষের। আর যদি মধ্যবিত্ত সমাজের কাউকে এই ইঞ্জেকশন দিতে হয়, তবে তা হবে অলীক কল্পনা। এই রোগের নাম স্পাইনাল মাসকিউলার অ্যাট্রোফি। এই বিরল রোগের জন্য রোগীর শরীরে কোমরের নীচের অংশ ক্রমশ অসাড় হয়ে যায়। এক কথায় জীবন্ত পাথরে পরিনত হয় ওই রোগী। রাজস্থানের পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর নরেশ শর্মার একমাত্র পুত্র হৃদয়াংশ এক বিরল জেনেটিক ডিসওর্ডার নিয়ে জন্মেছিল। এই রোগের চিকিৎসা খরচ আকাশছোঁয়া। বিশেষ জিন থেরাপি দিতে হয় রোগীকে। আর এই বিশেষ জিন থেরাপির জন্য প্রয়োজন একটি ইঞ্জেকশন। যার দাম সাড়ে ১৭ কোটি টাকা। সব শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে রাজস্থান পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর নরেশ শর্মার।
ততদিনে ২০ মাসের ছোট্ট শিশুটির নীচের অংশ অসাড় হয়ে গিয়েছে। আর বিশেষ জিন থেরাপির জন্য ওই ইঞ্জেকশন দিতে হবে ২৪ মাসের মধ্যেই। ফলে ছোট্ট হৃদয়াংশকে বাঁচাতে রাজস্থান পুলিশ শুরু করে ক্রাউড ফান্ডিং। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিয়ে হৃদয়াংশকে বাঁচানোর জন্য টাকা চেয়ে আবেদন করা হয়। কড়া ডেডলাইন দিয়ে চলে ক্রমাগত প্রচার। আর ২০ মাসের ছোট্ট হৃদয়াংশের মর্মান্তিক পরিণতির গল্প পড়ে সোশ্যাল মিডিয়া গলে জল হয়ে যায়। অনেকেই সেই পোস্ট শেয়ার করতে শুরু করেন। এবং যে যেভাবে পারেন সাহায্য করতে শুরু করে একরত্তি হৃদয়াংশকে। এই কাহিনী নজরে আসে বলিউড অভিনেতা সোনু সুদের। তিনি নিজেও সাহায্য করেন এবং এই পোস্টটি শেয়ার করে সকলের সাহায্য প্রার্থনা করেন। পাশাপাশি ভারতীয় দলের ক্রিকেটার দীপক চাহারও সোশ্যাল মিডিয়ায় সাহায্য চান হৃদয়াংশের জন্য। এতেই কাজ হয়। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলে শেয়ার হওয়ায় দ্রুত অর্থ সাহায্য উঠতে শুরু করে। পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও এবং অন্যান্য সংস্থাও অর্থ সাহায্য করে। মাত্র তিন মাসের মধ্যেই জোগাড় হয় প্রায় ৯ কোটি টাকা।
এরপর জয়পুরের জেকে লোন হাসপাতালে হৃদয়াংশের চিকিৎসা শুরু হয়। এবং সাড়ে ১৭ কোটির ইঞ্জেকশন আনিয়ে তা প্রয়োগ করা হয়েছে ছোট্ট শিশুটির ওপর। আর বাকি টাকা আগামী এক বছরের মধ্যে তিনটি কিস্তিতে হাসপাতালকে দিতে হবে নরেশ শর্মাকে। ছোট্ট হৃদয়াংশের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার এরকম হৃদয় গলানো গল্প এথন ভাইরাল। সকলেই চাইছেন যত দ্রুত ওই শিশু সুস্থ হয়ে খেলা করুক।
Discussion about this post