প্রখর দাবদাহে গোটা রাজ্য যখন জ্বলছে, তখনই নির্বিচারে চলছিল গাছ কাটার কাজ। অভিযোগ, পিডব্লুডি বা পূর্ত দফতরের প্রয়োজনীয় অনুমতি না নিয়েই বেআইনিভাবে টেন্ডার ডেকে বৃক্ষ নিধন চালাচ্ছিল তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত বোর্ড। পূর্ত দফতরের আধিকারিকরাই খবর পেয়ে এসে গাছ কাটা বন্ধ করায় এবং গাছের গুড়ি বাজেয়াপ্ত করেন। ঘটনাটি ঘটেছে হুগলির আরামবাগ ব্লকের বাতালন পঞ্চায়েত এলাকায়। ঘটনা জানাজানি হতেই ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।
আরামবাগের বাতানল পঞ্চায়েতের আওতায় থাকা তেলুয়া থেকে বলুন্ডি যাওয়ার পাকা রাস্তাটি কয়েক বছর আগেই পূর্ত দফতরের অধীনে গিয়েছে। অভিযোগ, সেই রাস্তার ধারে থাকা কয়েকশো গাছ পঞ্চায়েতের অধীনে দেখিয়েই বন বিভাগের অনুমতি আদায় করা হয় কাটার জন্য। অনুমতি পাওয়ার পরই টেন্ডার ডেকে ওই গাছগুলি কাটার কাজ শুরু হয় এবং বেআইনিভাবে বিক্রিও করা শুরু হয়েছিল। খবর পেয়েই শনিবার সেখানে পৌঁছে যান আরামবাগ মহকুমার পূর্ত দফতরের সহকারি ইঞ্জিনিয়ার। বন্ধ করিয়ে দেন বেআইনিভাবে গাছ কাটার কাজ এবং আটক করেন গাছের গুড়ি। পূর্ত দফতরের ওই আধিকারিক ক্যামেরার সামনে কিছু না বললেও তিনি স্থানীয় বন বিভাগকে বিস্তারিত জানান। আরামবাগ বন বিভাগের রেঞ্জার আশরাফুল ইসলাম স্বীকার করে নিয়েছেন, এক বছর আগে বাতানল গ্রাম পঞ্চায়েত এবং আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির দেওয়া ভুল তথ্যের ভিত্তিতেই গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। পূর্ত দফতরের আভিযোগ পেয়েই তিনি সেই অনুমতিপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
যে ঠিকাদার সংস্থা গাছ কাটার কাজে নিযুক্ত হয়েছিল সেই সংস্থার এক কর্মীর দাবি, বাতানল পঞ্চায়েত প্রধান টেন্ডার ডেকেছিল গাছ কাটার জন্য। আমরা সেই টেন্ডারে উত্তীর্ণ হয়েই কাজ শুরু করেছি। বন দফতরের অনুমতিও পঞ্চায়েত জোগার করেছে বলে তাঁর দাবি।
এই ঘটনা জানাজানি হতেই ওই বাতানল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁদের দাবি করছেন, এলাকার তৃণমূল নেতা এবং পঞ্চায়েত প্রধান কারচুপি করে গাছ কেটে বিক্রি করে দিচ্ছিল। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, এই প্রচন্ড গরমে গাছের গোড়ায় জল দেওয়ার বদলে গাছ কেটে সাফ করে দিচ্ছে পঞ্চায়েত। ভোটের মুখে এলাকায় দ্বন্দ্ব বাধানোর চেষ্টা বলেই দাবি গ্রামবাসীদের।
বিরোধীদের দাবি, তৃণমূলের উপরতলা থেকে নীচতলা পর্যন্ত আগাগোড়া দুর্নীতিগ্রস্থ। সর্বোচ্চ নেতৃত্বের দেখাদেখি নীচুতলার নেতারাও চুরি করতে ব্যস্ত। পুরশুড়ার বিজেপি বিধায়ক বিমান ঘোষের বক্তব্য, চুরি করার একটা অন্য পদ্ধতি আবিস্কার করে ফেলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। পূর্ত দফতরের রাস্তা পঞ্চায়েতের অধীনে দেখিয়ে গাছ কেটে বিক্রি করছে। সাধারণ মানুষকে বোকা বানাতেই এই পদ্ধতি। আসন্ন লোকসভা ভোটে সাধারণ মানুষ গাছ থেকে শুরু করে সমস্ত ধরণের চুরির বিরুদ্ধেই রায় দেবেন বলে দাবি করেন পুরশুড়ার বিজেপি বিধায়ক।
গোটা অভিযোগের তির যার দিকে সেই বাতালন পঞ্চায়েতের প্রধান দিলীপ রায় অবশ্য এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি, বরং ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে গিয়েছেন। সংবাদমাধ্যের কর্মীরা দিনভর ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শিশির সরকার অবশ্য সংবাদমাধ্যমকে বলেন বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। তবে তিনিও এই রাস্তার ধারের গাছ কাটার অনুমতিপত্র দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন বন বিভাগের আধিকারিক।
তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত পঞ্চায়েত বোর্ডের বেআইনিভাবে গাছ কাটা ও বিক্রি বন্ধ করে দিল রাজ্যের পূর্ত দফতর। লোকসভা ভোটের মুখে যা নিয়ে যথেষ্ট অস্বস্তিতে শাসকদল তৃণমূল। এই প্রচন্ড গরমে উন্নয়নের নাম করে ভুল তথ্য দেখিয়ে রাস্তার ধারের কয়েকশো গাছ কেটে সাফ করে দেওয়া হচ্ছিল দিনের আলোয়। যা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন গ্রামবাসীরা। এখন প্রশ্ন উঠছে যে গাছগুলি কাটা হল সেখানে নতুন করে আদৌ গাছ লাগানো হবে কি না? উত্তরের অপেক্ষায় গ্রামবাসীরা।
Discussion about this post