বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা এবং ক্ষোভ দুটোই লক্ষণীয়। ক্ষোভের কারণ, দেশজুড়ে যেভাবে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বা মব শুরু হয়েছে তা আটকাতে পারেনি সেনাবাহিনী। কিন্তু সরকার উদ্যোগী না হলে এই এই কাজ কি সেনাবাহিনীর দ্বারা সম্ভব? পাশাপাশি সেনাবাহিনীর তরফ থেকে প্রত্যাশা পূরণের বার্তা দেওয়া হলেও তা পূরণ করা হচ্ছে কিনা, উঠছে নানাবিধ প্রশ্ন।
সম্প্রতি দেখা কেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জে এম কাদেরের বাড়িতে মব তৈরি করা হয়েছে ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ চলেছে, আর সরাসরি অভিযোগ এসেছে জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার পরই আবারো সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, অর্থাৎ তারাই এই ধরনের পরিস্থিতির সামাল দিতে সক্ষম হচ্ছে কিনা বা সরকারের উদাসীনতার মাঝে তারা মবের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারছে কিনা ইত্যাদি। এই ঘটনার মাঝে দেখা গিয়েছে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা দিবস ও পালন হলো বাংলাদেশ জুড়ে। এই দিনের অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে সে দেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ্জামান, নানাবিধ বিষয়ে বক্তব্য রাখলেন।
উল্লেখ্য,বাংলাদেশের শান্তি স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে কাজ করে চলেছে সে দেশের সেনাবাহিনী। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নানা পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সরব হতেও দেখা গিয়েছে সেনাবাহিনীকে। প্রধান উপদেষ্টা মোঃ ইউনুছের কু চক্রান্ত গুলিকে বারংবার প্রতিহত করেছে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার। যার ফলে ইউনূস সরকারের এখন সব থেকে বড় বাধা সেনাপ্রধান। জানা যাচ্ছে, এবার সেই সেনাপ্রধানই নাকি হঠাৎ বড় বার্তা দিয়েছেন। প্রকাশ্যে এসেছে সরকার ও সেনাপ্রধানের দ্বন্দ্ব। এর আগেও বহু বার জাতির উদ্দেশ্যে বড় বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান। ফের এই আবহে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষ্যে চিন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যের মাধ্যমে বড় বার্তা জেনারেল ওয়াকার জামানের।
সেনাপ্রধান বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষীদের মহান আত্মত্যাগ ও অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২৯ মে বিশ্বব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস’ উদযাপন হয়ে আসছে। বাঙালি জাতি সর্বদাই শান্তিপ্রিয় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অগ্রদূত হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। ১৯৮৮ সালে শান্তিরক্ষা মিশনে যাত্রা শুরুর পর হতে সুদীর্ঘ তিন যুগের বেশী সময় ধরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১ লাখ ৬২ হাজার ৩৫ জনের বেশি শান্তিরক্ষী মোট ৪০টি স্থানে ৫৬টি শান্তিরক্ষা মিশনে অত্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব সম্পন্ন করেছে।
পাশাপাশি তিনি আরও বলেন,বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শান্তিরক্ষা মিশনে প্রথমবারের মতো ডিআর কঙ্গোতে তিনটি হেলিকপ্টার মোতায়েন করেছে, যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য একটি নতুন মাইলফলক। গত ৪ মার্চ সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক-এ চলমান শান্তিরক্ষা মিশনে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় নির্মিত ‘তোয়াদেরা কমিউনিটি ক্লিনিক’ এর উদ্বোধন করা হয়-যা বিশ্ব পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে আরও উজ্জ্বল করেছে।
অর্থাৎ এদিন শান্তিরক্ষা মিশনের মঞ্চ থেকে বাংলাদেশের সাফল্যের কথা তুলে ধরলেন সেনাপ্রধান। গোটা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বর্তমানে বাংলাদেশ একটি বিশ্বস্ত ও গ্রহণযোগ্য নাম বলেও দাবি করলেন তিনি। এছাড়াও তিনি স্পষ্ট করলেন বাংলাদেশের বীররা শুধুই শান্তি রক্ষায় অংশ নিচ্ছে না, বরং মানবিক উদ্যোগেও এগিয়ে আসছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের এমন সাফল্যে গোটা দেশবাসী গর্বিত।
Discussion about this post