যত দিন যাচ্ছে বাংলাদেশে প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূসের পায়ের তলার মাটি আলগা হচ্ছে। অন্তত বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি দেখলে সেটাই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিবাদ, মিছিল তো চলছেই। এবার গত বুধবার ঢাকার রাস্তায় দেখা গেল হাজার হাজার মানুষের সমাগম। তাদের থেকে একটাই স্লোগান মুখরিত হচ্ছে গোটা ঢাকা জুড়ে। সেটা হল, ফ্যাসিবাদ বন্ধ করো। জানা গিয়েছে, ওই আন্দোলনটি বিএনপির সদস্যরা আয়োজন করেছিলেন। তবে কি ফের কোনও পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে? দেশের মানুষ রাস্তায় নামলে কি করবেন প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস?
এই আন্দোলনের ফলে স্বাভাবিকভাবেই ঢাকার রাস্তায় যানজটের সমস্যা তৈরি হয়। পথ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। জানা গিয়েছে, এই আন্দোলনটি হয় নির্বাচন ইস্যুকে কেন্দ্র করে। দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানানো হল বিএনপির তরফে। এমনকি তারা নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করে দিচ্ছেন তাদের দাবিদাওয়ায়। এ বছরের শেষ অর্থাৎ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি উঠছে মিছিল থেকে। তবেই প্রথম নয়, বিএনপির শুরু থেকেই এ বছরের মধ্যেই নির্বাচন চেয়ে এসেছিল। এদিকে প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস চাইছেন, আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হোক। আসলে ইউনূসের সরকার চাইছে, সংস্কার করে নির্বাচন করাতে। ঠিক যেমনটা চাইছে এনসিপি। তবে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামানও বিভিন্ন সময় জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত। কিন্তু তাতেও কোনও হেলদোল নেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। তারা সংস্কারের উপর জোর দিচ্ছে। কিন্তু নির্বাচন করাতে গড়িমসি করছে। এদিকে ক্রমশ সুর চরাচ্ছে বিএনপি। বিএনপি বাংলাদেশের শক্তিশালী রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, আওয়ামী লীগের পর বিএনপি একমাত্র রাজনৈতিক দল, যাদের ওপর বহু মানুষ ভরসা করে। এর ফলে যদি বিএনপির দিনের পর দিন লাগাতার বাংলাদেশ জুড়ে মিছিল বিক্ষোভ করে, তবে উত্তাল হয়ে উঠবে বাংলাদেশ। বাড়বে রাজনৈতিক অস্থিরতা।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ এর ৫ ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে গঠন করা হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। যার মাথায় বসানো হয় নোবেল জয়ী মহম্মদ ইউনুসকে। মনে করা হয়েছিল, বাংলাদেশের বিশৃংখল পরিস্থিতি আয়ত্তে আসবে। কিন্তু উল্টোটাই বরং চোখে পড়ছে। ক্রমশ মৌলবাদী সংগঠনগুলি মাথাচারা দিচ্ছে। অনেকেই বলছেন, দেশ চালাতে ব্যর্থ প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস। গত বুধবার সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন বিএনপি শীর্ষ নেতা তারেক রহমান। সেখানে তিনি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়ে বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর থেকে নিজ পর্যন্ত পচন ধরেছে।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টা যেন মানতে নারাজ। তিনি বছর ঘুরিয়ে দেবেন নির্বাচন করতে, সেটাই মনে করা হচ্ছে তার নানা মন্তব্যে বক্তব্যে। শুধু তাই নয়, জাপান সফরে গিয়ে সেখান থেকেও তিনি একটি বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইছে শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দল। অর্থাৎ বিএনপিকে উল্লেখ করছে তিনি। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, তবে কি প্রধান উপদেষ্টা বলতে চাইছেন, যে তার পক্ষে রয়েছে বাকি রাজনৈতিক দলগুলি? এর পাশাপাশি বিএনপি যে শক্তিশালী বড় রাজনৈতিক দল এই মুহূর্তে বাংলাদেশে, সেই দলকে একটি মাত্র রাজনৈতিক দল বলে আখ্যা দিয়ে কোনভাবে ছোট করা হচ্ছে? এমন নানা প্রশ্ন উঠে আসছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক আঙ্গিনায়।
Discussion about this post