বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-সহ দলের একঝাঁক নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রী দেশছাড়া। শতাধিক জনপ্রতিনিধি জেলবন্দি। তার মধ্যেই সোমবার আওয়ামী লীগের ৭৬–তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন হল। হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন, বর্তমান বাংলাদেশেও আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। সেই উপলক্ষে সামান্য শক্তিও দেখাল শেখ হাসিনার দল। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে পোস্টার সাঁটিয়ে, কোখাও ঝটিকা মিছিল করে আবার কোথাও লিফলেট বিলি করে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ তাঁদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে। সবচেয়ে মজার বিষয় হল, আওয়ামী লীগের পোস্টার পড়েছে বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলায় বিএনপি–র দফতরের দেয়ালেও। জানা যাচ্ছে, বিএনপি ও এনসিপির বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যালয়ের বাইরেও পোস্টারে পোস্টারে ছয়লাপ করেছে আওয়ামী কর্মী সমর্থকরা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে যে প্রশ্নটা সবচেয়ে বেশি ঘুরপাক খাচ্ছে, সেটা হল আগামী বছর বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনার দল অংশগ্রহণ করতে পারবে? শেখ হাসিনা কি স্বসম্মানে বাংলাদেশে ফিরতে পারবেন?
যদি প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়, তাহলে এখনও পর্যন্ত সেই সম্ভাবনা নেই। কারণ, আওয়ামি লিগের রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন আপাতত সাসপেন্ড করেছে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন। তাই দলটির ভোটে লড়ার অধিকার নেই। আর দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দেওয়া এই মুহূর্তে কঠিন। বেশ কয়েকটি সম্ভাবনার উপর নির্ভর করছে শেখ হাসিনার বাংলাদেশে ফেরা। তবে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান সময়ের নীরিখে হাসিনার দেশে ফেরার সম্ভবনা অনেকটাই উজ্জ্বল। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বেজেছে যুদ্ধের দামামা। ভারতের অপারেশন সিঁদূর এবং এর পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সমীকরণে ক্ষুব্ধ চিন। বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে মার্কিন যুক্তরাষ্টের জন্য সামরিক ঘাঁটির প্রসঙ্গেও ঢাকার ওপর ক্ষুব্ধ চিন। সবমিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন আওয়ামী লীগের জন্য অনুকূল। তাই আওয়ামী নেতারা অনেকেই দেশে ফেরার জন্য ব্যাগপত্র গোছাচ্ছেন বলেই জানা যাচ্ছে। এমনকি শেখ হাসিনাও দেশে ফিরতে মরিয়া। তবে তাঁর বাংলাদেশে ফেরা অনেকটাই নির্ভর করছে ভারতের মনোভাব ও গ্রীণ সিগন্যালের ওপর।
যদিও শেখ হাসিনা তাঁর কাজ শুরু করে দিয়েছেন। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে বিঁধে হাসিনা তাঁর বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেছেন, ‘আজ আমরা গভীর সঙ্কটজনক সময় পার করছি। একটি অসাংবিধানিক সরকার অন্যায় ভাবে আমাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। যেমনটা ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়া খানও করেছিল। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা গণহত্যার মামলা সম্পর্কে হাসিনা দাবি করেন, আমি কাউকে হত্যা করিওনি, হত্যা করতে পারিও না।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, এই মুহূর্তে শেখ হাসিনা জল মাপছেন। তিনি জানেন, যত সময় যাবে, ততই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মন মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে বিষাক্ত হয়ে উঠবে। আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ থেকে চিরতরে বিনাশ করার যে প্রচেষ্টা হয়েছে বা এখনও চলছে, তা সফল হবে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মুখোশ খুলতে শুরু করেছে ইউনূস বাহিনীর। আর এটা চলতে থাকলে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এবং আওয়ামী সভ্য সমর্থকদের মধ্যে ফের সমর্থন ফেরত আসতে শুরু করবে। যা ইতিমধ্যেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাঁদের মনে আত্মবিশ্বাস ফেরাতে শেখ হাসিনাও নিয়মিত সোশ্যাল মিডিয়া এবং নিজস্ব নেটওয়ার্কে বাংলাদেশের ভিতর থাকা আওয়ামী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাথছেন। তাঁদের সাহস ও উদ্দিপণা দিচ্ছেন। আওয়ামী লিগের ৭৬তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে তাঁর ভাষণে যেমন বলেছেন, “বাঙালিরে দাবায়ে রাখতে পারবা না। আওয়ামী লিগকে দাবায়ে রাখতে পারব না। আওয়ামী লিগকে নিকেশ করা যায়নি, যাবে না”।
Discussion about this post