নতুন জীবনের পথে পা রাখলেন সারজিস আলম। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জনপ্রিয়তম ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম সারজিস বিয়ে সারলেন অতি গোপনে। কাক পক্ষীও টের পেত না, যদি না বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তার ফেসবুক পোস্টে সারজিসের বিয়ের খবর জানাতেন। জানা গিয়েছে, গত ৩১ জানুয়ারি তিনি বিয়ে সেরেছেন। তবে কাকে তিনি জীবনসঙ্গী হিসেবে বরণ করলেন তা জানতে আরও দুই দিন লেগে যায়। উল্লেখ্য, সারজিসের আগে হাসনাত আবদুল্লাহর বিয়ের খবর সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে উঠে এসেছিল। গত ১১ অক্টোবর হাসনাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে বিয়ে করেন বলেই খবর। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, যে ছাত্র নেতা, সমন্বয়ক বা উপদেষ্টাদের রোজ নিয়ম করে সংবাদ মাধ্যমে দেখা যায় গরম গরম বক্তৃতা দিতে, তাঁরা কেন অতি গোপনে বিয়ে সারছেন? অতি উৎসাহী কেউ কেউ এই প্রশ্নও তুলছেন যে, কী এমন রোজগার করেন ওই ছাত্র নেতারা, যে পালা করে বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন!
গত বছরের জুন জুলাইয়ের গণ আন্দোলনের ছয় মাস পেরোতে চলল। তবু বাংলাদেশে এখনও আন্দোলনের হিড়িক চলছে। বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা এখনও বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন চালাচ্ছে। অপরদিকে বন্ধ কল-কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন। এই তালিকার সর্বশেষ যুক্ত হল, জুলাই আন্দোলনে আহত ব্যক্তিরা। যারা গত রোববার কার্যত পুলিশের সমস্ত ব্যারিকেড ভেঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারি বাসভবন ঘেরাও করে বসেন। জুন জুলায়ে যে সহিংস আন্দোলন হয়েছিল তাতে বহু লোক হতাহত হয়েছিল। তদারকি সরকার ক্ষমতায় এসে ওই আহতদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু আহতদের দাবি তারা এখনো ঠিকঠাক চিকিৎসা পাননি ক্ষতিপূরণও পাননি। ফলে তারা গত শনিবার থেকে ঢাকার রাস্তায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেন এবং রোববার মধ্যরাতে মুহাম্মদ ইউনূসের বাড়ি ঘেরাও করে বসেন। ছাত্রনেতা তথা সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ কোনরকমে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে আহতদের সেখান থেকে সরিয়ে দেন। কিন্তু তারা এখনো ঢাকার রাস্তায় অবস্থান করছেন। আহত ব্যক্তিরা ঠিকঠাক পরিসেবা না পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন। তারাই প্রশ্ন তুলছেন এই ছাত্র নেতারা কি এমন রোজগার করেন যে একে একে বিয়ে-সারছেন?
গত ৫ আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠেছিল। পরবর্তী কয়েকমাসে সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ বা মাহফুজ আলমের মতো ছাত্র নেতাদের সর্বত্র দেখা গিয়েছিল। কেউ কেউ বাংলাদেশের তদারকি সরকারের উপদেষ্টা পদে আসীন, আবার কেউ কেউ সমন্বয়ক বা গুরুত্বপূর্ণ কোনও পদে বসেছেন। জুলাই গণ আন্দোলনে শারীরিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদানের জন্য জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাঊন্ডেশনের গঠন হয়েছিল। অভিযোগ, সেই দফতরে গিয়ে বহু অসহায় মানুষ বিফল হয়েছেন। অনেকেই ঠিক মতো চিকিৎসা পরিষেবা পাননি। ফলে তাঁরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
আহতদের অনেকেই চলতশক্তি হারিয়েছেন। তবুও শ্যালাইনের চ্যানেল হাতে নিযেই তাঁরা রাস্তায় এসে বসেছেন। তাঁরাই এবার অভিযোগের আঙ্গুল তুলছেন সারজিস, নাহিদ, হাসনাতের মতো ছাত্র নেতাদের বিরুদ্ধে।
জানা যাচ্ছে, গাজীপুরের রাজিন্দ্র রিসোর্টে পারিবারিকভাবে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে সারজিস আলমের। শ্বশুর ব্যারিস্টার লুৎফর রহমানের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার গৌরীচন্না ইউনিয়নের লাকুরতলা গ্রামে। তবে পেশাগত কারণে তিনি পরিবার নিয়ে এখন ঢাকায় থাকেন। এবং সারজিসের স্ত্রী একজন কোরআনের হাফেজা। অপরদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ নিতান্তই ঘরোয়া আয়োজনে বিয়ে সম্পন্ন করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহপাঠিকে। সেই সময় তিনি দাবিও করেছিলেন তিনি টিউশন পড়িয়ে ও কোর্স বিক্রি করে কোটি টাকা রোজগার করেন। কিন্তু সারজিস আলমের রোজগার সম্পর্কে অনেকেই অজানা। ফলে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, এরা বিয়ে করার টাকা পাচ্ছেন কোথা থেকে?
Discussion about this post