ধীরে ধীরে কী সাবালক হচ্ছে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম? যে সংবাদমাধ্যম এতদিন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের দেওয়া বিবৃতি ছেপে উদ্ধার হচ্ছিল, তাঁদেরই কেউ কেউ এখন প্রশ্ন তুলছেন প্রধান উপদেষ্টার দূর্নীতি নিয়ে! এটা কি কোনও পরিবর্তনের লক্ষণ? নাকি নিছকই কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এই সাহস দেখাতে পারছে?
বিগত কয়েকমাসে দেখা যাচ্ছে, মাত্র কয়েকটি বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করছে। বাংলাদেশের মাত্র কয়েকজন সংবাদ বিশ্লেষক বা রাজনৈতিক বিশ্লেষক তাঁদের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে ক্রমাগত মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে কথা বলে আসছিলেন। তাঁরাও দাবি করছেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম কোনও এক অজ্ঞাত কারণে ভয়ে সিঁটিয়ে আছে। কেউ কেউ দাবি করেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-সমন্বয়কদের দাপটেই নাকি বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম সত্যি সংবাদ প্রকাশ করতে পারছে না। তাঁরা কেবলই প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস উইংয়ের থেকে দেওয়া বিবৃতি ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিজ্ঞপ্তি ছেপেই দায় সারছে। কোনও তদন্তমূলক বা সত্যানুসন্ধানী খবর প্রকাশে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের অনীহা চোখে পড়ার মতো ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করেছে। বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের দুর্নীতি, ছাত্রনেতাদের দাদাগিরি বা মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধেও খবর ছাপতে দেখা যাচ্ছে। যা হাজারো খারাপের মধ্যেও কিছুটা আশার আলো বলে মনে করছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
এ ক্ষেত্রে ১৭ জুন মঙ্গলবার, বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত একটি খবরের দিকে অবশ্যই দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হয়। ওই প্রতিবেদনের হেডলাইন হল, ড. ইউনূসের এক প্রতিষ্ঠানেই হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি! এই ধরণের খবর, বাংলাদেশের নিরীখে অত্যন্ত বিরল। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের এক প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকম প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ড. ইউনূস দেশের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকম থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা কয়েক হাত ঘুরে সামাজিক ব্যবসার নামে বিদেশে পাচার করেছেন। শ্রমিক কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য আদালতে বিচারাধীন মামলার রায় নিজের পক্ষে নিতে বিচারকসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ঘুষ দেওয়ার জন্য একটি দালালচক্রের সঙ্গেও চুক্তি করেন। আর ড. ইউনূসের এসব অর্থ পাচার, দুর্নীতি ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দালিলিকভাবে প্রমাণিতও হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে গ্রামীণ টেলিকম তথা গ্রামীণফোনের লাইসেন্স গ্রহণ করেছিলেন মুহাম্মদ ইউনূস। লাইসেন্স গ্রহণের আগে তিনি সরকারের কাছে অঙ্গীকার করেন, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দরিদ্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য গ্রামীণফোনের লাইসেন্স নিতে চান তিনি। মুনাফা নয় বরং দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সেবা দানই হবে এই প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য। ফলে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রামীণ টেলিকমকে লাইসেন্স দেয় তৎকালীন হাসিনা সরকার। কিন্তু মুহাম্মদ ইউনূস দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে গ্রামীণফোনের অধিকাংশ শেয়ার বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেন। জানা গেছে, গ্রামীণ টেলিকম বর্তমানে গ্রামীণফোনের ৩৪.২০ শতাংশ শেয়ারের অংশীদার, যার মাধ্যমে গ্রামীণ টেলিকম প্রতি বছর গ্রামীণফোন থেকে হাজার কোটি টাকার ওপর ডিভিডেন্ড পায়। কোম্পানি আইনের ২৮ ধারায় গঠিত এই অলাভজনক কোম্পানির কোনও শেয়ার মূলধন নেই, কোনও ব্যক্তিমালিকানা নেই। অথচ মুহাম্মদ ইউনূস প্রতি বছর গ্রামীণ টেলিকমের হাজার কোটি টাকার ওপর ডিভিডেন্ট সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে কয়েক হাত ঘুরিয়ে সামাজিক ব্যবসার নামে বিদেশে পাচার করে আত্মসাৎ করছেন।
যা অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী গুরুতর দণ্ডনীয় অপরাধ। আর এই কাজটি তিনি করেছেন সরকারের প্রধান হিসেবে অবস্থান করেই। জানা যাচ্ছে, গ্রামীণ টেলিকম শুরু থেকে যে সব কর ফাঁকি দিয়েছে, সেগুলো যোগ করলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। এই কর ফাঁকির হিসাব শুধু গ্রামীণ টেলিকমের। ডঃ ইউনূসের অন্যান্য সংস্থার হিসেব এর মধ্যে নেই। সম্প্রতি ইলন মাস্কের সংস্থা স্টারলিংককে বাংলাদেশে ব্যবসার যে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, সেটাও তাঁর সংস্থা গ্রামীন টেলিফোনের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেই। ফলে সরকারের প্রধান হয়ে বসে মুহাম্মদ ইউনূস নিজের সংস্থার ব্যবসাই বৃদ্ধি করে চলেছেন। বাংলাদেশের সরাসরি কোনও লাভ হচ্ছে না। তিনি তাঁর গ্রামীণ ব্যাঙ্কের বকেয়া করের ৬৬৬ কোটি টাকাও মাফ করিয়ে নিয়েছেন নিজেরই জারি করা নির্বাহী আদেশে। এটাও কার্যত অনৈতিক। প্রশ্ন সব ক্ষেত্রেই উঠছে। এতদিন বাংলাদেশের গণমাধ্যম চুপ করে ছিল, এবার তাঁরাও লেখালেখি শুরু করেছে। তাহলে কি এবার চাকা ঘুরতে শুরু করল বাংলাদেশে?
Discussion about this post