বাংলাদেশে কি রাজনীতির বদল ঘটল? হঠাৎ করেই কি চাল উল্টে গেল? কারণ সরকার এবং জামাতের দূরত্ব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি তৈরি হওয়ার আগে দেখা গিয়েছিল, সরকারের সবথেকে কাছের রাজনৈতিক দল জামাত। এখন জামাত ই ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টিকে অবলম্বন করি সরকার এগিয়ে যেতে চাইছে। কারণ সেরকম বাস্তবতা লক্ষ্য করা গিয়েছে। জামাতের বহু কর্মকান্ডকে বৈধতা দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কিন্তু হঠাৎ করেই জামাত ই ইসলামী ইউটার্ন নিয়েছে। ঐক্যমত কমিশনের বৈঠক ত্যাগ করল তারা। জানা যাচ্ছে, ৩০ টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও, অন্যান্য দল অংশগ্রহণ করলে জামাত করেনি। এক ধরনের প্রতিবাদের জন্যই তারা এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করেনি। অর্থাৎ এখানেই মনে করা হচ্ছে, নিশ্চিতভাবে সরকারের সঙ্গে তাদের বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। যদি সেটাই হয়ে থাকে তবে বাংলাদেশের রাজনীতি এখন কোন দিকে মোড় নিচ্ছে? নির্বাচনের আগেই কি ইউনুস জামাতের সম্পর্কের অবনতি? কি বলছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা?
জামাতের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের ভাটার কারণ কি? জানা যাচ্ছে, লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে মহম্মদ ইউনূসের। আর তাতেই ক্ষুব্ধ হয়েছে জামাত। জামাত ই ইসলামীর তরফে বলা হচ্ছে, সরকার একপেশে হয়ে গিয়েছে। সরকারের নিরপেক্ষতা নষ্ট হয়েছে। আর সেই কারণে তারা বৈঠকে অংশগ্রহণ করেনি। একটি দলের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করায় সরকারের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এরই প্রতিবাদের জামাত বৈঠকে যায়নি। এমনকি সরকার তাদের নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করবে বলে মনে করে জামাত। এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, সরকার নিরপেক্ষ রয়েছে। কোনভাবেই বিএনপির দিকে ঝুঁকে যায়নি। আশা করা যাচ্ছে, পরবর্তী দুটো বৈঠকে অংশগ্রহণ করবে জামাত।
তবে প্রশ্ন উঠছে, জামাত যে সরকারের সঙ্গে সাময়িক দূরত্ব তৈরি করছে, তাতে দলের জন্য কি ভালো হবে? আগেও কি লাভজনক হবে? নাকি আখেরে ক্ষতিই হবে? কারণ সম্প্রতি দেখা গিয়েছে, কোর্টের আদেশে তাদের নিবন্ধন ফিরে পেয়েছে। তার আগে পর্যন্ত সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক খুবই ভালো ছিল। এমনকি সরকারের সমস্ত কর্মকাণ্ডে তারা সমর্থন দিয়ে আসছিল। মনে করা হচ্ছিল, কোর্টের আদেশটি ঝুলে রয়েছে,সেই কারণে তারা সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখছে। তবে এখনো পর্যন্ত অনেকগুলো ধাপ বাকি রয়েছে। তারা তাদের প্রতীক ফিরে পাবে কিনা সেটা নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্ভর করছে। আর সেই কারণেই জামাত সরকারের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ভালো রেখেছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে, যদি সরকারের আস্থার বাইরে চলে যায়, তবে তাদের প্রতীক ফিরে পাওয়াটা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কাজেই সরকারের সঙ্গে সাময়িক দূরত্ব তৈরি হলেও তারা পাকাপাকিভাবে দূরত্ব তৈরি করবে না। বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে সরকার বিএনপি’র দিকে যে ঝুঁকে পড়েছে, সেটা নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, তারই মাঝে উঠে এসেছে, নির্বাচন বিষয়ে গড়িমসিতে সরকার চাপে পড়েছে কিনা। আরো একটি বিষয় সরকার চাপে পড়েছে। সেটি হল, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে বলা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের বিচার সম্পন্ন হয়নি। বিচার কার্যক্রম চলছে। তাহলে যে বিচার সম্পন্ন হল না, তাহলে সেই দলকে কিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে সরকার? এটা নিয়েও উঠে আসছে প্রশ্ন। কারণ ইতিমধ্যে জাতিসংঘ ইউটার্ন নিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। জাতিসংঘের চেয়ারম্যান ভলকার তুর্ক যে মন্তব্য করেছেন, তাতে আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে কিনা জাতিসংঘ, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। জাতিসংঘ নাকি বলেছেন, আইন সংশোধন করে যেকোনও রাজনৈতিক দলের স্বাধীনতা ঘোষণা করা ঠিক না।
এই বিষয়ে তারা উদ্বিগ্ন বলেও উল্লেখ করেছেন। ফলে উল্টো দিক থেকে সরকারও যদি দূরত্ব তৈরি করে, তবে তারাও আগে পর এক বন্ধু হারাবে। আর এটা ঘটলে, আগামী দিনে পথ চলাতে সরকারের সমস্যা তৈরি হতে পারে। আর সেই কারণেই যে কোন মূল্যে জামাতের সঙ্গে সমঝোতার পথেই হাঁটবে সরকার। এটাই মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির সঙ্গে সখ্যতা যদি প্রমাণ হয় তবে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ বিএনপি একপ্রকার নিশ্চিত, নির্বাচন হলে তারা ক্ষমতায় আসবে। আর রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গেলে সমস্ত পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে চলতে হয়। না চললে কি পরিণতি হয়, সেটা আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে বুঝেছেন বিএনপি। ফলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখন কোন দিকে যাচ্ছে, সেটা ঘিরেই তুমুল আলোচনা চলছে বাংলাদেশের অন্দরে।
Discussion about this post