বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে আর রাজনৈতিক অস্ত্র অবশিষ্ট নেই। গতবছরের সরকার পতনের পর দীর্ঘ ১১মাসে সমস্ত অস্ত্রই ব্যবহার করে ফেলেছেন এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস। হাতে এখন শুধুই অবশিষ্ট পতিত দুর্নীতির বিচার। ৫ অগাস্টের আগে মোহাম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে দায়ের মামলা গুলি প্রায় রায় দেওয়ার দিকে এগিয়ে গিয়েছিল। সেই সময় মোহাম্মদ দুর্নীতি দমন কমিশনকে কি বলেছিলেন আর বর্তমানে কি বলছেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিস্তর আলোচনা।
চলতি মাসে ই প্রধান উপদেষ্টা মোঃ ইউনুস ৩৯ জন সফর সঙ্গীকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশের সরকারি তো হোটেলের কোটি কোটি টাকা খরচ করে লন্ডন সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে পৌঁছে তিনি বিবিসিকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। মূলত সেই সাক্ষাৎকারে তিনি যুক্তরাজ্যের সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের প্রসঙ্গে কথা বলেন। ঐ সাক্ষাৎকারে সাংবাদিকের তরফ থেকে প্রশ্ন করা হয় যুক্তরাজ্যের সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার কন্যা, কিন্তু সেই দেশের দুর্নীতি দমন কমিশন বেআইনিভাবে জমি নেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে উদ্যোত। কিন্তু পুরো বিষয়টি অস্বীকার করেছেন টিউলিপ। এবং এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই তিনি সাক্ষাৎকারের আবেদন জানিয়ে একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন আপনাকে, আপনি কি টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে এই সাক্ষাৎকারটি করতে চান? তার উত্তরে প্রধান উপদেষ্টা সরাসরি জানান, না। কারণ এটি একটি আইনের প্রক্রিয়া , আরে আইনি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে চাই না।
ফের মোহাম্মদ ইউনুসকে প্রশ্ন করা হয় ব্রিটিশ সরকারের ইন্ডিপেন্ডেন্স এডভাইজার টিউলীপের বিষয়ে একটি তদন্ত করেছেন এবং তাকে নির্দোষ ঘোষণা করেছে, এর প্রেক্ষিতে টিউলিপ জানান বাংলাদেশের দুদক তার বিরুদ্ধে কোন তথ্য প্রমাণ সামনে আনতে পারেনি। কিন্তু তারপরেও কেন বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।? এটি আদালতের বিষয়, আদালতের নিয়ম মেনেই তদন্ত চালানো হচ্ছে। অর্থাৎ আদালতে সিদ্ধান্ত নেবে এই তদন্ত জানানোর জন্য যথেষ্ট প্রমাণ আছে কিনা বা তদন্ত বন্ধ করা হবে কিনা। এরপর তাকে আবারও প্রশ্ন করা হয়, এখনো পৃথক ভুল সেটি কোন ভিত্তিহীন তদন্ত নয়, তদন্ত উদ্দেশ্য প্রণোদিত নয়, কিন্তু টিউলিপ সিদ্দিকের আইনজীবী বলছেন, কমিশন তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রমাণই দেখাতে পারেনি এমনকি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি, তবে মোহাম্মদ ইউনুস উত্তর দিচ্ছেন আইনি ক্ষেত্রে আইনজীবীদের মধ্যে তথ্য বিনিময় হয়। তাতে সাংবাদিক রাজিনি বৈদ্যনাথন বলছেন এমন কিছু হয়েছে বলে জানা যায়নি, অর্থাৎ টিউলিপের তরফের বিভিন্ন অভিযোগ থাকা পর তাকে দেশে ফেরানোর বিষয়টি নিয়ে কি ভাবছে অন্তর্ভুক্তির সরকার, তাতেও মোহাম্মদ ইউস জানান আইনি প্রক্রিয়া আইনে সিদ্ধান্ত যা হবে সেটাই করা হবে। অর্থাৎ তিনি একপ্রকার জানানোর চেষ্টা করলেন দুদক বা বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের ওপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে মোহাম্মদ ইউনুসের।
কিন্তু অনেকেই বলছেন যে মোহাম্মদ ইউনুস গত বছর ৫ আগস্ট এর আগে ন্যায় বিচার পাওয়া যাচ্ছে না বলে শেখ হাসিনার সরকার এবং দুদকের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতেন অর্থাৎ, শ্রম আইন লঙ্ঘন করে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিকদের বঞ্চিত করার অভিযোগে কোম্পানির চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চার কর্মকর্তাকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড এছাড়া প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা দেওয়ার রায় দিয়েছিল শ্রম আদালত। যার ফলেই মোহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে বিচার ব্যবস্থা আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে বিষোদগার করতে দেখা গিয়েছিল। সেই মোহাম্মদ ইউনুসই এখন বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে সাক্ষাৎকারে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনি প্রক্রিয়া , আইনের রীতিনীতি নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করছেন তাদের ওপর পূর্ণ আস্থা ব্যক্ত করছেন। তবে বিশেষজ্ঞদের অভিমত সবটাই আওয়ামী লীগ সরকারকে চাপে ফেলে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার নয়া ষড়যন্ত্র অন্তর্বর্তী সরকারের।
Discussion about this post