সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাঙ্ক বা সুইস ব্যাঙ্কে বাংলাদেশি নাগরিকদের জমা করা অর্থ ২০২৪ সালে ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ ৪৪ হাজার সুইস ফ্রাঁ। যা বাংলাদেশের টাকার অঙ্কে প্রায় ৮ হাজার ৬৭৮ কোটি ৬৭ লাখ ৭২ হাজার টাকা। ১৯ জুন সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক সুইস ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক বা এসএনবি ২০২৪ সালে তাদের দেশের ব্যাঙ্কগুলোর দায় ও সম্পদের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। তাতেই উঠে এসেছে এই তথ্য। ২০২৩ সালের নিরিখে এই অঙ্ক বেড়েছে প্রায় ৩৩ গুন। যা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন করে চাপান উতর শুরু হয়েছে।
এসএনবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সুইস ব্যাঙ্কে বাংলাদেশীরা জমা রেখেছিলেন ১ কোটি ৭৭ লাখ ১২ হাজার ফ্রাঁ। যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৫৯ কোটি সুইস ফ্রাঁ। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। তারও দুই তিন মাস আগে থেকে বাংলাদেশে অশান্তি শুরু হয়েছিল। ফলে ২০২৪ সালের একটা অংশ বাংলাদেশ অন্তরবতীকালীন সরকারের অধীনেই ছিল। যার প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি সুইজারল্যান্ড-সহ ইউরোপের একাধিক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে গিয়ে নাকি দাবি করেছিলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। কিন্তু দেখা গেল তাঁর শাসনকালের ১০ মাসেই বাংলাদেশের নাগরিকদের টাকার অঙ্ক বেড়ে গেল সুইস ব্যাঙ্কের খাতায়। অনেকেই দাবি করছেন, বিগত সরকারের সময়ের সুবিধাভোগীদের একটি বড় অংশ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। তাঁরাই সুইস ব্যাঙ্কে নিজেদের টাকা জমা করেছেন। তাতেই বৃদ্ধি পেয়েছে বাংলাদেশীদের আমানত। কিন্তু সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, যদি কোনও বাংলাদেশি, নাগরিকত্ব গোপন রেখে অর্থ জমা রেখে থাকেন, তবে ওই টাকা এই হিসাবে অন্তর্ভূক্ত হয়নি। গচ্ছিত রাখা স্বর্ণ বা মুল্যবান সামগ্রীর আর্থিক মূল্যমানও হিসাব করা হয়নি প্রতিবেদনে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ সাল পর্যন্ত সুইস ব্যাঙ্কে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে বাংলাদেশিদের আমানত। ২১ সালে আমানত বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁতে। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এরপর থেকে টানা দুই বছর টানা সেই আমানত কমেছিল। অর্থাৎ, হাসিনার আমলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০২৩ সালের পর থেকে তা আবার বাড়তে থাকে। তবে সুইস ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক এই পরিসংখ্যান শুধুমাত্র আমানতের অঙ্ক প্রকাশ করে, এর মধ্যে কোনও অর্থ বৈধ না অবৈধ তা উল্লেখ থাকে না। যদিও ২০১৮ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে ‘অটোমেটিক এক্সচেঞ্জ অব ইনফরমেশন’ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এর আওতায় ২০২৪ সালে সুইস ফেডারেল ট্যাক্স প্রশাসন ১০৮টি দেশের সঙ্গে প্রায় ৩.৭ মিলিয়ন ব্যাঙ্ক হিসাবের তথ্য বিনিময় করেছে। কিন্তু আজও বাংলাদেশ সেই তালিকায় নেই। কারণ বাংলাদেশ এখনও এই প্ল্যাটফর্মে অংশ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়নি। বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, “বাংলাদেশ এখনও স্বচ্ছতার আন্তর্জাতিক কাঠামোতে অংশ না নেওয়ায় দেশের নাগরিকরা সহজেই বিদেশে অর্থ লুকিয়ে রাখতে পারছেন। তথ্য পেতে হলে আমাদের আগে নিজেদের স্বচ্ছতার আওতায় আনতে হবে।
ফলে, আওয়ামী লীগকে দোষ দিয়ে আসলে বর্তমান প্রশাসনের মধ্যেই টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। অভিযোগের তির জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা সমন্বয়কদের দিকে। হাসিনা আমলের দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দাবি করা হয়, বছরে গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছে হাসিনা সরকারের মন্ত্রী আমলারা। সেটা যদি এখন বন্ধ হয়ে থাকে, তাহলে বাংলাদেশের রিজার্ভ বাড়েনি কেন? সেই টাকাই কি সুইস ব্যাঙ্কে ঢুকলো?
Discussion about this post