এই মুহূর্তে বাংলদেশে নির্বাচন একটি বড় ইস্যু। আদেও নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে নাকি ডামাডাল পরিস্থিতিতেই রয়েছে? সেই নিয়ে নানা বিতর্ক অব্যাহত। অনেকে বলছেন, যতই বলা হোক ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, আদতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। অনেকে আবার সরকার পরিবর্তনের নানা তত্ত্ব খাড়া করছেন। আর এই পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী একদমই আলোচনার বাইরে রয়েছে। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেনাবাহিনীর একটি ফটোকার্ড ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে, সেনাবাহিনী নাকি সরকারকে ছটি নির্দেশনা দিয়েছে। যদিও সেনাবাহিনীর তরফে বিষয়টি মিথ্যে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে সাংবাদিক সম্মেলন করে নির্বাচনের বিষয়ে সেনাবাহিনীর কি ভাবনা, তাদের কি মতামত সেটা একরকম পরিষ্কার করে দিয়েছে। তবে কি সেনাবাহিনীকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে নির্বাচনের বিষয়ে? কিসের অপেক্ষায় সেনাপ্রধান? কি বলছে সেনাবাহিনী?
বাংলাদেশে সেনাবাহিনী কিংবা সেনাপ্রধান দেশের জাতীয় কোনও বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ দেশের জনগণ সেনা বাহিনীকে ভরসা করে থাকে। তাই নির্বাচনী ইস্যু হোক, বা করিডোর, বন্দর….সব বিষয়ে সেনাবাহিনী কি ভাবছে, তাদের কি মতামত, সেটা অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। এমনকি সরকারও বিভিন্ন সময় সেনাবাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা যায়। শেখ হাসিনার আমলেও তেমনটাই দেখা গিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হওয়ার পর থেকে, যমুনা ও ক্যান্টনমেন্ট এর মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে বলে দাবি করেন অনেকে। যদিও দু পক্ষের তরফে এ বিষয়ে তেমন কোনও কথা বলেনি। কিন্তু বারে বারে এটা স্পষ্ট হয়েছে, মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার যে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, তাতে খুব একটা সাই দেননি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান। এখন নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশে তুমুল আলোচনা। বেশ কয়েকবার সেনাপ্রধানীর মুখ থেকেও নির্বাচনী প্রসঙ্গ শোনা দিয়েছে।
কিন্তু বিগত কয়েকদিন লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, নির্বাচন ইসুটে তেমন কোনও কথা বলছেন না সেনা প্রধান। আর এই পরিস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি ফটো কার ভাইরাল হয়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে, সেনাবাহিনী নির্বাচন ইস্যুতে ছয়টি নির্দেশনা দিয়েছে সরকারকে। যেগুলিকে মেনে চলতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। অন্যদিকে সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এটি মিথ্যে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, কি এমন ছিল সেটিতে? জানা যাচ্ছে, সেখানে ছিল, একদিনে নির্বাচন না করে, আট বিভাগে নির্বাচন করতে হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে নির্বাচন হতে হবে। প্রতিটি নির্বাচন কেন্দ্রে অন্তত পাঁচজন সেনাবাহিন সদস্য, দুজন বিজিবি এবং তিনজন করে পুলিশ থাকতে হবে। সেনাবাহিনীর মেজিস্ট্রেসি পাওয়ার থাকতে হবে। প্রত্যেকটি জায়গায় সার্বিক পরিস্থিতি লাইভ টেলিকাস্ট করতে হবে। যদিও এই প্রচারটিকে সেনাবাহিনী মিথ্যে বলে স্পষ্ট করে দিয়েছে। তবে এই মুহূর্তে সেনাবাহিনীর অবস্থান ঠিক কি, সেটা ঘিরে অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। আর সেই জায়গা থেকেই, সেনাবাহিনী সাংবাদিক সম্মেলন করে সেটা পরিষ্কার করেছে। সেখানে তারা জানিয়েছে, সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষণে গত তিন সপ্তাহে ৫৬টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করেছে। এখনও পর্যন্ত ৯ হাজার ৬৬৭ টি অস্ত্র উদ্ধার করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি গত তিন সপ্তাহে ৪৫২ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে বলে তথ্য দেওয়া হয়েছে। শিশু সন্ত্রাসীদের ধরার জন্য অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। এছাড়াও বাংলাদেশের অন্দরে মব কালচার কম চলছে বলে জানানো হয়েছে।
তবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, নির্বাচনের ইস্যুতে কি বলল সেনাবাহিনী। জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের নির্দিষ্ট কোনও তথ্য সেনাবাহিনীর কাছে আসেনি। এখানেই বোঝা যাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের বিষয়ে কোনও তথ্যই দেয়নি সেনাবাহিনীকে। সরকারের তরফ থেকে যখন নির্দেশনা আসবে, তখন তারা কাজ করবে, এবং দেশের জনগণকে জানাবে বলে জানানো হয়েছে। তবে প্রশ্ন উঠছে, সরকারের তরফে কোনও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না এলে কি সেনাবাহিনী নির্বাচনের বিষয়ে কাজ করবে না? যদি সরকার তাদের অন্ধকারে রাখে, তখনও কি সুর চড়াবে না সেনাবাহিনী? কারণ এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণের আস্থা, ভরসার জায়গা সেনাবাহিনী এবং সেনাপ্রধান। যেভাবে নির্বাচন নিয়ে সরকারের অন্দরে খেলা চলছে, তাতে কি নিয়ন্ত্রণ করবে না সেনাবাহিনী? এখন দেখার, জাতীয় নির্বাচনের টালমাটাল পরিস্থিতি কোন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় সেনাবাহিনী বা সেনাপ্রধান।
Discussion about this post