গত লোকসভা ভোটে মালদহ উত্তর লোকসভা কেন্দ্রে পরাজিত হয়েছিল কংগ্রেস। হাত সরিয়ে ফুটেছিল পদ্ম। এদিকে লোকসভা ভোটে মালদহ থেকে জয় এখনও অধরা তৃণমূলের। এবার কি পারবে রাজ্যের শাসকদল মালদহ আসন দুটি দখল করতে। রাজ্য রাজনীতিতে কংগ্রেসের জমানা প্রায় শেষ। কংগ্রেসের পর ৩৪ বছরের বাম শাসনকে পরাস্ত করে রাজ্য জুড়ে এখন ঘাসফুলের বাড়বাড়ন্ত। দেখতে দেখতে রাজ্যের মসনদে ১৩ বছর কাটিয়ে ফেলেছে তৃণমূল। বাম-কংগ্রেসকে সরিয়ে এখন তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি। বামেরা রাজ্যে শূণ্য। কংগ্রেসের গড় বলতে এখন শুধুমাত্র মালদহ। তাও গত লোকসভা নির্বাচনে মালদহ উত্তরের আসনটি হাতছাড়া হয়েছে কংগ্রেসের।
২০০৯ সালে মালদহ আসন ভেঙে উত্তর ও দক্ষিণ মালদহ আসনে বিভক্ত হয়। বলাবহুল্য বরাবর মালদহ আসনটি গণি খানের আসন নামেই পরিচিত। ১৯৮০ সাল থেকে আমৃত্যু পর্যন্ত গণি খান মালদহের সাংসদ ছিলেন। ২০০৬ সালে ১৪ ই অপ্রিল মৃত্যু হয় তাঁর। গণি খানের আসনে উপনির্বাচনে জয় পান প্রয়াত নেতার ভাই আবু হাসেম খান চৌধুরী অর্থাৎ ডালু বাবু। ২০০৯ সালে মালদহ লোকসভা আসনটি বিভক্ত হওয়ার পর মালদহ দক্ষিণ থেকে দাঁড়াতে থাকেন ডালু। পরপর ৩ বার জিতেছেন তিনি। তবে আসন্ন মালদহ নির্বাচনে ডালুর বদলে কংগ্রেসের প্রতীকে প্রার্থী করা হয়েছে তাঁর ছেলে ইশা খান চৌধুরীকে। মালদহ উত্তর থেকে প্রার্থী করা হয়েছে মোস্তাক আলমকে। যিনি কিনা গণি খানের সঙ্গে কাজ করেছেন। দু-দুবার হরিশ্চচন্দ্রপুর থেকে বিধায়কও নির্বাচিত হয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করে থাকেন গত লোকসভা ভোটে ভোট কাটাকাটির জন্যই মালদহ উত্তরের আসন থেকে গণি খানের পরিবার ভিটে মাটি হারায়। সেবার তৃণমূলের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে ছিলেন মৌসম বেনজির নুর ও কংগ্রেসের টিকিটে ঈশা খান চৌধুরী। কেউই জিততে পারেননি। ভোট কাটাকুটির মাঝে লাভের গুড় খেয়েছিল বিজেপি। জিতে যান ২০১৪ সালে সিপিআইএম প্রার্থী হিসেবে মৌসম বেনজির নুরের কাছে হেরে যাওয়া খগেন মুর্মু। ভিন্ন প্রতীকে দুই ভাইবোনের লড়াইয়ে মৌসম পেয়েছিলেন ৪ লক্ষ ২৫ হাজার ২৩৬ টি ভোট ও ঈশা পেয়েছিলেন ৩ লক্ষ ৫ হাজার ২৭০ টি ভোট। দুটি ভোটের পরিসংখ্যান এক করলে যা দাঁড়ায় ৭ লক্ষেরও বেশি।
অন্য দিকে খগেন পেয়েছিলেন ৫ লক্ষ ৯ হাজার ৫২৪ টি ভোট। অর্থাৎ ভোট কাটাকুটি যে হয়েছে তা পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট। আসন্ন নির্বাচনে মৌসম বেনজির নুরকে প্রার্থী করেনি তৃণমূল। তিনি এখন রাজ্যসভার সাংসদ। মৌসমের জায়গায় মালদহ উত্তর থেকে দাঁড় করানো হয়েছে প্রাক্তন আইপিএস কর্তা প্রসূন ব্যানার্জিকে ও মালদহ দক্ষিণ থেকে দাঁড় করানো হয়েছে শাহনওয়াজ আলি রেহানকে। অন্যদিকে খগেন মুর্মুর উপরই ভরসা রেখেছে বিজেপি। অর্থাৎ মালদহ উত্তরের ক্ষেত্রে কংগ্রেস ও বিজেপি পরীক্ষিত প্রার্থীর উপর ভরসা রাখলেও তৃণমূল হেঁটেছে ভিন্ন পথে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন মালদহ উত্তরের ক্ষেত্রে অনেকটাই ব্যাকফুটে রয়েছে তৃণমূল। কারণ তৃণমূলের দুর্নীতি ও বিজেপির পালে হওয়া এক্ষেত্রে এগিয়ে রাখবে খগেন মুর্মুকে। অন্যদিকে কংগ্রেসের মোস্তাক আলম মালদহের রাজনীতিতে পুরনো খিলাড়ি। দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। তাই গত বারে মালদহের উত্তরের ভোটে দ্বিতীয় হওয়া তৃণমূলকে একপাশে সরিয়ে আদতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইটা হবে বিজেপি-কংগ্রেসের মাঝেই।
Discussion about this post