সংবিধান অনুযায়ী ভারতের যে কোনও নাগরিক লোকসভা ভোটে লড়তে পারেন। ফলে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলির পাশাপাশি যেমন কম পরিচিত রাজনৈতিক দলের হয়ে অনেকে ভোটে দাঁড়ান, তেমনই কেউ কেউ নির্দল হিসেবে ভোটে লড়েন। বঙ্গ রাজনীতিতে মূল ধারার চারটি দল তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস এবং বামদলগুলি ছাড়াও এসইউসিআই, বিএসপি, আইএসএফ অনেক আসনে প্রার্থী দিয়ে থাকেন। কিন্তু যারা নির্দল হিসেবে ভোটে দাঁড়ান, তাঁদের চিন্তাভাবনা স্বতন্ত্র। এ ক্ষেত্রে কেউ কেউ অন্যের বাড়া ভাতে ছাই দিতে ভোটে লড়েন, আবার কেউ দলীয় টিকিট না পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়েই ভোটে দাঁড়িয়ে যান। আবার কেউ কেউ নিজের ব্যক্তিগত কোনও ক্ষোভ-অভিমান থেকেও ভোটে নির্দল প্রার্থী হয়ে যান। যেমন এবার ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন সামান্য লরিচালক সাহেব চৌধুরী। এমনিতেই ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে তারকাখচিত একটি কেন্দ্র হল ঘাটাল। কারণ এখানে তৃণমূলের প্রার্থী বলি অভিনেতা দেব আবার বিজেপির প্রার্থীও বলি অভিনেতা হিরণ। তাঁদের মাঝখানে লড়াইয়ের ময়দানে একজন সামান্য লরিচালক আলাদা করে নজর কাঁড়ছেন বৈকি।
সাহেব চৌধুরী নামে এক লরিচালক কেন ঘাটালের মতো হাই প্রোফাইল লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হলেন? সাহেবের দাবি, অত্যন্ত নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান তিনি। লরি চালিয়ে রোজগার এবং সংসার প্রতিপালন করেন। কিন্তু দিন দিন পুলিশের জুলুম বাড়ছে। বিশেষ করে রাস্তায় বের হলে লরিচালকদের উপর পুলিশের জুলুমবাজী বেরেই চলেছে। এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেই তিনি এবার ভোটের ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছেন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে তাঁর নির্বাচনী প্রতীকও লরি।
৩৮ বছরের সাহেবের আসল বাড়ি পিংলা বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত হাতিহলকা গ্রামে। দুই ছেলে এবং স্ত্রীকে নিয়েই তাঁর সংসার। একসময় নিজেই একটি লরির মালিক ছিলেন। কিন্তু বছর কয়েক আগে সেই লরি বিক্রি করে দেন। এখন অন্য মালিকের লরি চালিয়ে সংসার চালান সাহেব চৌধুরী। এবার লোকসভা ভোটে ঘাটাল থেকে মনোনয়ন পেশ করে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছেন নিজের এলাকায়। একসময় বিজেপি করতেন। তবে সাহেবের দাবি, এখন কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন তিনি। কিন্তু রোজ রোজ রাস্তায় পুলিশের জুলুমবাজীর শিকার হতে হয় তাঁর মতো অসংখ্য লরিচালকদের। রাস্তায় বের হলেই জরিমানা, না হয় তোলা দিতে হয় বলে অভিযোগ তাঁর। সাহেবের কথায়, আমার মতো সব লরিচালকরাই জানেন পুলিশ কিভাবে জুলুম চালায়। দিনে দিনে এই জুলুম বেড়েই চলেছে। সাহেবের আরও দাবি, এলাকার জনপ্রতিনিধি, বিধায়ক, সাংসদ কেউই এই বিষয়ে সাহায্য করেন না। তাই কাউকে বলেও উপকার পাওয়া যায় না।
সাহেব বলছেন, এই নির্বাচন আসলেই প্রতিবাদের কথা, ক্ষোভের কথা খুব সহজেই সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা যায়। তাই ভোটে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি এলাকায় এলাকায় ঘুরে আমার বক্তব্য তুলে ধরব। অনেকেই আমার মতো গাড়ি চালিয়ে সংসার চালান। তাঁরা আমাকে ভোট দেবেন। এত প্রতীক থাকতে কেন লরি চিহ্ন বেঁছে নিলেন? এই প্রশ্নের উত্তরে সাহেব জানালেন, যেহেতু আমি লরিচালক, তাই লরি প্রতীকই আমার পছন্দ হল। প্রতিবেশীদের কথায়, সাহেব বরাবরই প্রতিবাদী চরিত্র। অন্যায় সহ্য করতে পারে না। হক কথা বলতেও পিছপা হয় না। এবার সে প্রতিবাদের ধরণ বদলে একেবারে লোকসভা ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নিল। তবে দুই তারকা প্রার্থী দেব এবং হিরণের মাঝে তাঁর প্রতিবাদ কতটা গুরুত্ব পায় সেটাই দেখার।
Discussion about this post