রাজ্যে চাকরিহারা গ্রুপ সি এবং ডি’দের জন্য ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই ভাতার বিরুদ্ধেই বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চে মামলা ওঠে। তারই শুনানিতে রাজ্যের হয়ে রাজ্য সরকারের এডিজি কিশোর দত্ত যে যুক্তিগুলি বিচারপতির বেঞ্চে রাখলেন, সেখানে বিচারপতি অমৃতা সিনহা যে প্রশ্নগুলি করলেন, তাতে অনেক কিছু স্পষ্ট হয়ে গেল। পাশাপাশি রাজ্যের আইনজীবীকে ল্যাজে গোবরে অবস্থা করলেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। অর্থাৎ ভাতাতেই ফেসেছে রাজ্য সরকার। বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এই মামলার শুনানি শুরু হতেই ভাতার বিরুদ্ধে মামলাকারীর হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, যে সংবিধানের ধারাকে হাতিয়ার করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাতা দিচ্ছেন সেটা একেবারেই অনৈতিক। কারণ সংবিধানের 282 নম্বর অনুচ্ছেদে পরিষ্কার করে বলে দেওয়া রয়েছে, যে সমস্ত মানুষেরা দূরাবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন তাদেরকেই এই ভাতা দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু যে সমস্ত গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের চাকরি গিয়েছে, তারা তো অসৎ পথে জাতি পেয়েছেন। এমনকি দীর্ঘদিন চাকরি করে, তারা কেউ কেউ গাড়ি বাড়ি করেছেন। তাহলে তাদের কি কি ভাতা দেওয়া যায়? সেখানে রাজ্য সরকারের এডিজি কিশোর দত্ত জানান, একটি অন্তর্বর্তী সিদ্ধান্ত। সুপ্রিম কোর্টে এখনও এই মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। সেই মামলা নিষ্পত্তি হয়ে গেলে, ভাতার বিষয়টিও নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। এই সাওয়াল জবাব শোনার পর বিচারপতি অমৃতা সিনহা প্রশ্ন করেন, যাদেরকে রাজ্য সরকার ২০ হাজার এবং ২৫ হাজার টাকা করে ভাতা দিচ্ছে তাদের থেকে কি আদেও রাজ্য সরকার কিছু পাচ্ছে? নাকি তারা বাড়িতে বসে বসেই এই ভাতা পেয়ে যাচ্ছে? এমনকি বিচারপতি সিনহা বলেন, কতদিন এই ভাতা দেবে রাজ্য সরকার? যতদিন সুপ্রিম কোর্টের রিভিউ পিটিশন আটকে থাকবে ততদিন? পাশাপাশি রাজ্য সরকার ২০ হাজার ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করল কি করে? যদি তারা এমনি এমনিই ভাতা দেওয়া হয় তবে যারা বেকার তারা কেন ভাতা পাবে না? এমনকি রাজ্য সরকারের এডিজির পক্ষ থেকে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি গিয়েছে একটি বিশাল অংশের। আর সেকটার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ রেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। অন্যদিকে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, যাদের চাকরি চলে গিয়েছে তারা প্রত্যেকেই এখন এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ যে মামলা করেছেন এবং যে ভাতা জীবীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, তারা প্রত্যেকে সমান। আর পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের চাকরি বাতিলের নির্দেশকে হাতিয়ার করে, যেভাবে এই ভাতার ব্যবস্থা করেছেন, তাতে সংবিধানে যে রাজ্য সরকারকে ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করছে এই রাজ্য সরকার। যদিও তিনি মামলাটিকে ফরোয়ার্ড করে দেওয়ার কথা বলেন। তবে এটা পরিষ্কার, যে যে প্রশ্নগুলি বিচারপতি উত্থাপিত করলেন, তাতে অবস্থা সংকটে রাজ্য সরকারের বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের।
Discussion about this post