অভিনেত্রীর তকমাটা অনেক আগেই গা থেকে মুছে গিয়েছে। এখন তিনি পুরোদস্তুর নেত্রী। তিনি লকেট চট্টোপাধ্যায়। ২০১৯ এর পর আবারও হুগলি লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে লড়াই করছেন লকেট। তবে অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে লকেট টিকিট পাবেন কিনা তা নিয়ে বেশ কিছুটা ধোঁয়াশা ছিল। নির্বাচন ঘোষণার পর শোনা গিয়েছিল তিনি শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে দাঁড়াতে পারেন। জল্পনা শুরু হতেই পোস্টার পড়েছিল এলাকায়। পোস্টারে লকেটকে প্রার্থী হিসেবে না মেনে নেওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। কোন নাম উল্লেখ না থাকলেও অনেকেই নিশ্চিত বিজেপির অন্দর থেকেই এই দাবি উঠেছিল। কারণ বিজেপি কাকে প্রার্থী করবে তা তৃণমূল বা সিপিআইএম কারোরই দেখার বিষয় নয়। পুরোটাই দলগত।
লকেট নিয়ে ক্ষোভ এই প্রথমবার নয়। সম্প্রতি প্রচারে বেড়িয়ে বেশ কিছু জায়গায় বিক্ষোভের মুখে পড়েন নেত্রী। অভিযোগ তাকে এলাকায় দেখাই যায় না। এরপরই দলের মণ্ডল সভাপতিদের নাম করে পোস্টার পড়তে দেখা যায় হুগলিতে। সেখানে বলা হয় লকেটের হাত থেকে বাঁচান। বিজেপি মণ্ডল সভাপতিদের একাংশের দাবি ছিল এলাকায় বিক্ষোভের মুখে পড়ে লকেট তাঁদেরকেই শাসাচ্ছেন। বলছেন ভোটের পরে দেখে নেব। বিক্ষুব্ধদের প্রশ্ন, প্রার্থীকে যদি মানুষ এলাকায় না পান তাতে তাঁদের দোষ কোথায়। একই অভিযোগ রয়েছে তৃণমূলেরও। তাঁদের প্রায়শই বলতে শোনা যায় ভোটের সময় ছাড়া বিদায়ী সাংসদকে দেখাই যায় না।
বলাবাহুল্য বেশ কয়েকবার লকেটকে নিয়ে অস্বস্তি বেড়েছে দলের। গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব হয়েছে স্পষ্ট। তবুও গত লোকসভা ভোটে জয়ী প্রার্থীর উপরই শেষ পর্যন্ত ভরসা রাখে গেরুয়া শিবির। লকেটকেও কোমর বেঁধে প্রচারে নেমে পড়তে দেখা যায়। প্রচারের ফাঁকে খোলা আকাশের নীচে খুন্তি হাতে রাঁধতে দেখা যায় তাঁকে। এদিকে লকেটের বিরুদ্ধে তৃণমূল দাঁড় করিয়েছে ঝুমঝুম ব্যানার্জি ওরফে রচনা ব্যানার্জিকে। তিনিও সিলভার স্ক্রিনের মানুষ। দিদি নম্বর ওয়ান থেকে সটান রাজনীতির মঞ্চে। রাজনীতিতে এক্কেবারেই আনকোরা। তাই মাঝে মধ্যেই আলটপকা অনেক কিছুই বলে ফেলেন। যেমন চালকলের ধোঁয়া দেখে হুগলির চারিপাশে শিল্প প্রত্যক্ষ করেছেন তিনি। নিন্দুকদের জবাব দিতে রিলসও বানিয়েছেন। অস্বস্তি বেড়েছে শাসকদলের। শোনা যায় রচনাকে রাজনীতিতে সাবলম্বী করতে কলকাতা থেকে হুগলিতে চলে আসে প্রতিনিধি দল। তাঁর আলটপকা মন্তব্যে সেন্সর বসানো হয়। অর্থাৎ কোথায় কী ভাবে কথা বলতে হবে, কতটুকু কথা বলতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। দিদি নম্বর ওয়ানের আগে চুটিয়ে বাংলা সিনেমায় অভিনয় করেছেন রচনা। তাঁর সমসাময়িক টলিউডের প্রায় সকল বড় অভিনেতার সঙ্গে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। বাংলার বাইরে পা রেখে ওড়িয়া, তামিল, তেলেগু সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন। বিগবি অমিতাভের সঙ্গে সূর্যবংশম নামে বলি মুভিতেও স্ক্রিন শেয়ার করতে দেখা গিয়েছে। সিনেমায় আসার আগে মডেলিং করতেন রচনা। হয়েছিলেন মিস ক্যালক্যাটা। নজরে পড়ে যান সুখেন দাসের। তিনি ঝুমঝুমের পরিবর্তে রচনা নাম রাখলেন। রচনার বাংলা সিনেমায় পা পড়ে সুখেন দাসের হাত ধরেই।
সেই রচনাই এখন তৃণমূল প্রার্থী। রাজনীতিতে তারকা প্রবেশ নতুন কিছু নয়। দেব, হিরন প্রত্যেকেই রূপোলি জগৎ থেকে এসেছেন। এখন প্রশ্ন হুগলিতে কেন তারকা প্রার্থী দাঁড় করালেন মমতা। শোনা যাচ্ছে এর জন্য দায়ী দলের গোষ্ঠী কোন্দল। তাই সম্পূর্ণ বাইরের জগৎ থেকে প্রার্থী দাঁড় করানো হয়। এরফলে সবপক্ষ সমানতালে প্রার্থীর জন্য ঝাঁপাবেন। হয়েছেও তাই। তবে অনেকেই মনে করছেন, তারকা চমকে ব্যালট বক্সে বেগ পেতে হবে লকেটকে। যদিও লকেট নিজেও রূপোলি জগৎ থেকে এসেছেন। সম্প্রতি প্রচারপর্বে বেড়িয়ে রচনা বিদায়ী সাংসদের কাজ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন? প্রশ্ন কানে যাওয়া মাত্র লকেট হ্যান্ড বিল দেখিয়ে খরচের হিসেব দেখিয়ে দেন। এমপি ল্যাডের টাকা একশো শতাংশ মানুষের কাজে লাগানো হয়েছে দাবি করা হয়। বলাবাহুল্য একজন সাংসদ হিসেবে লকেট কতটা কাজ করতে পেরেছেন, কতটা মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছেন সেইসব রচনার রাজনীতির ভাগ্য রচনা করবে।
Discussion about this post