শুরুটা হয়েছিল ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মোদীকে উপেক্ষা করার একটি ভিডিও নিয়ে। ওই ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ম্যাক্রোঁ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের অভ্যর্থনা জানাতে হেঁটে যাচ্ছেন। তিনি প্রথমে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সকে অভ্যর্থনা জানান এবং তারপর অন্যান্য অতিথিদের দিকে এগিয়ে যান। কিন্তু কাছেই বসে থাকা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ম্যাক্রোঁর সাথে করমর্দনের জন্য হাত বাড়ালেও ফরাসি প্রেসিডেন্ট তাঁকে উপেক্ষা করে ঘটনাস্থলে উপস্থিত অন্যদের অভ্যর্থনা জানান। ওই ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে বাংলাদেশি সংবাদ মাধ্যম স্পষ্টতই উচ্ছসিত। তাঁরা হেডলাইন করে বসে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট নরেন্দ্র মোদিকে অবজ্ঞা করলেন। কেউ কেউ একে ম্যাক্রোঁর কাছ থেকে মোদীর প্রতি কূটনৈতিক অবমাননা বলেও অভিহিত করেছে। যদিও এই বিষয়ে ভারত বা ফ্রান্স কোনও পক্ষই কোনও মন্তব্য করেনি। তবে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী সমাজ মাধ্যমে আলাদা আলাদা করে পোস্ট করটাই পুরো ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যায় বাংলাদেশি সংবাদ মাধ্যম। কারণ আরেকটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে দুই নেতা একসাথে কনফারেন্স হলে প্রবেশের আগে উষ্ণ শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন এবং করমর্দন করছেন। অনুষ্ঠানের অন্যান্য ফুটেজে দেখা যাচ্ছে যে ম্যাক্রোঁ এবং মোদি উষ্ণভাবে আলাপচারিতা করছেন। এও দেখা গিয়েছে ম্যাক্রোঁ আলিঙ্গনের মাধ্যমে মোদিকে প্যারিসে স্বাগত জানাচ্ছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর ছবি ট্যুইট করে লেখেন, আমার প্ৰিয় বন্ধুকে স্বাগত। ফলে ওই ভাইরাল ভিডিও ফুটেজ নিয়ে যে উচ্ছাস জন্মেছিল, তা অল্প সময়ের মধ্যেই চুপসে যায়। এবার ট্রাম্পের এক বাক্যে কেঁপে গেল বাংলাদেশ। বিশেষ করে বাংলাদেশি মিডিয়া। তাঁরা বুঝে উঠতে পারছে না, ডোনাল্ড ট্রাম্প আসলে কি বোঝাতে চাইলেন। তাই ফের প্রথমে উচ্ছাস ও পরে পাল্টি খেতে হল।
ব্যাপারটা একটু খুলেই বলা যাক। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠস্বর রুদ্ধ করে রেখেছে ইউনূস সরকার এবং বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-সমন্বয়করা। টানা হুমকি, চাকরি থেকে ছাঁটাই করা, পত্রিকা অফিসে হামলা, হুমকিতে কার্যত বিপর্যস্ত বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম। আর এই বিষয়ে সরাসরি নাম এসেছে হাসনাত আব্দুল্লাহ বা সারজিস আলমদের। আবার বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং রীতিমতো নজরদারি চালাচ্ছে প্রচারিত সংবাদের ওপর। একটু সরকার বিরোধী খবর হলেই “ফ্যাক্ট চেকিং”-এর নামে তা নাকচ করা হচ্ছে। অর্থাৎ চাপ তৈরি করা হচ্ছে যে সরকারের বলে দেওয়া লাইনে খবর করতে হবে।
এবার আসি ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদির বৈঠক ও সাংবাদিক সম্মেলন প্রসঙ্গে। ওই সাংবাদিক সম্মেলনে এক ভারতীয় সাংবাদিক বাংলাদেশের পালাবদল প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিপ স্টেট’–এর ভূমিকা নিয়ে একটি প্রশ্ন করেন। যার উত্তরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট অনেকটা অস্বস্তির সুরেই বলেন, ‘সেখান আমাদের “ডিপ স্টেটের” কোনও ভূমিকা ছিল না…এটা এমন একটা বিষয়, যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। স্পষ্ট করে বললে কয়েক শত বছর ধরে বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। আমি বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে পড়ছি। তবে বাংলাদেশের বিষয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর ওপর ছেড়ে দেব।’ অর্থাৎ বাংলাদেশের বিষয়টি ‘মোদি বুঝে নেবেন…’। ট্রাম্পের এই কথাতেই যত গোল বেঁধেছে। ঠিক কী বুঝে নেবেন মোদি? আর বাংলাদেশ নিয়ে যদি মোদি একাই বুঝে নেন, তাহলে নিশ্চই চোখ বুঝে সব মেনে নেবেন ট্রাম্প! তাহলে তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের দাবিই মেনে নিল বলতে হয়। এটা বুঝতে পেরেই বাংলাদেশে শোড়গোল পড়ে গিয়েছে।
ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ এই বিষয়ে নিজের মতো করে মন গড়া ব্যাখ্যা দিতে শুরু করেছেন। যেমন বাংলাদেশের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, তিনি ফেসবুক পেজে ট্রাম্পের মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ গোপনে মুহাম্মদ উউনূসের দ্বারস্থ হচ্ছেন আতঙ্কে। জানা যাচ্ছে, ট্রাম্পের বক্তব্যের নানা ব্যাখ্যা সামনে আসলেও প্রকৃত অর্থ বুঝতে দেরি হয়নি বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী মহলের। এর পরই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে অনেকের। মোদীর প্রতি ট্রাম্পের এমন বাড়তি আত্মবিশ্বাস দেখে বেশ ভয়ই পেয়েই ইউনূস সরকারের একাধিক কর্তা। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, মুহাম্মদ ইউনূস সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরতেই তাঁর কাছে নাকি ভিড় জমিয়েছেন তদারকি সরকারের বড় বড় উপদেষ্টারা। অনেকেই দাবি করেছেন ভারতের সঙ্গে সমঝে চলার। পাশাপাশি, তাঁরা পরামর্শ দিয়েছে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখারও। আর এই সমস্ত ঘটনাবলীতে সবচেয়ে বিভ্রান্ত বাংলাদেশি মিডিয়া। তাঁরাও এখন ভারতের বদনাম করার বদলে মোদি-ট্রাম্প বৈঠকে ভারতের কতটা লাভ হল, ভারত কি কি অস্ত্র, যুদ্ধবিমান পেল তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
Discussion about this post