গণ অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে বড় ধরনের পালাবদল হয়েছিল। ছয় মাস অতিবাহিত হতে চলল, কিন্তু সেই অভ্যুত্থানের সুফল আজও পায়নি বাংলাদেশ। বরং সময় যত গড়াচ্ছে, সেই অভ্যুত্থানের অংশীদারদের মধ্যে দূরত্ব ও ফাটল ক্রমশ বড় হচ্ছে। আর এই সুযোগে দেশে ফেরার পরিকল্পনা করছেন বাংলাদেশের বিতাড়িত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের আকাশ বাতাস কেঁপে উঠছে , “জয় বাংলা”, “জয় বঙ্গবন্ধু”, “শেখ হাসিনা ফিরছেন” এই ধরনের স্লোগানে। শুধু তাই নয় আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা যে কর্মসূচির ঘোষণা করেছেন তা নিয়ে ইতিমধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন আওয়ামী কর্মীরা। কার্যত গেরিলা কায়দায় ঢাকা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর ও শহরতলিতে লিফলেট বিতরণ, বিক্ষোভ মিছিল করে চলেছেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা।
রাজনৈতিক মহলের মতে, অন্তরবর্তীকালীন সরকার, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতপার্থক্য তৈরি হচ্ছে। সেই সুযোগেই ফের রাজনৈতিক মাটি খুঁজে পাওয়ার উপায় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। গত ৫ আগস্টের পর থেকে যেখানে আওয়ামী লীগের টিকিটিও খুঁজে পাওয়া যায়নি, আচমকাই সেই আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে। কখনও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, আসামিকে ছিনতাই করা, কখনও প্রকাশ্যে মিছিল বা লিফলেট বিলি করা। আওয়ামী লীগ যে বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যায়নি, তা বুঝিয়ে দিচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, গত ৫ আগষ্টের পর, যেখানে উপদেষ্টারা, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব এবং বিএনপি-সহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে যে ঐক্য দেখা গিয়েছিল, তা এই মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের সংবিধান থেকে প্রশাসনিক পরিকাঠামো সংস্কারের নামে যে দীর্ঘসুত্রিতা চলছে, তা নিয়ে কার্যত ক্ষোভ জমছে রাজনৈতিক মহলে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপি’র মধ্যে বড়সড় ফাটল দেখা দিয়েছে। বিএনপি কথায় কথায় তদারকি সরকারকেও এক হাত নিচ্ছে। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ, তিনি জানেন বিপদে পড়লে কখন উঠে দাঁড়াতে হয়। তাই তিনি এমন একটা সময় বেছে নিয়েছেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তনের জন্য, যেটা এই মুহূর্তে সবচেয়ে সহজ সময়। পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জনসংযোগ কর্মসূচি থেকে শুরু করে, বিক্ষোভ মিছিল, জনসমাবেশ, অবরোধ কর্মসূচি এমনকি হরতাল পর্যন্ত দেখে বসেছেন শেখ হাসিনা। তার নির্দেশ পাওয়ার পরই কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়েছেন আওয়ামী লীগ কর্মী সমর্থকরা। ফলে সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছেন মুহাম্মদ ইউনুস। রাজনৈতিক ওয়াকিবহুল মনে করছে, শেখ হাসিনা ভারতে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন, তিনি ভারতের সমস্ত সুযোগ সুবিধাও ভোগ করছেন। অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পও ক্ষমতা হাতে নিয়েছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশে একটা ডামাডোল চলছে, এখনই নির্বাচনের কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে ফের হারানো জমি পুনরুদ্ধার করতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। আগামী কয়েকদিনেই বোঝা যাবে, তারা কতটা সফল হচ্ছে
Discussion about this post