বাংলাদেশে এক ব্যাপক গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হারানোর প্রায় ছয় মাসের মাথায় ফের সক্রিয় হয়ে উঠল আওয়ামী লীগ। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তাঁরা। আসন্ন ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত একের পর এক কর্মসূচি পালনের ডাক দিয়েছে আওয়ামী নেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর দল ও দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লীগকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, সমস্ত বাঁধা এড়িয়ে, গ্রেফতারি ও দমন পীড়নের ভয় কাটিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে আন্দোলনে। তাঁর মূল লক্ষ্য মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাঁদের উৎখাত করে বাংলাদেশকে পুনরায় স্বাধীন করার আহ্বান মুজিবকন্যার। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এমন একটি সময় আওয়ামী লীগ এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, যখন দলের শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যায়ের অধিকাংশ নেতারা হয় কারাগারে, না হয় ‘পলাতক’ রয়েছেন। সেখানে কিভাবে এই ধারাবাহিক কর্মসূচি পালিত হবে? কে বা কারা দায়িত্ব নেবেন?
প্রসঙ্গত, মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আগামী ১৬ ও ১৮ই ফেব্রুয়ারি দেশজুড়ে অবরোধ ও হরতালের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ। “জনগণের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়া এই অবৈধ সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই,” বলেই দাবি করছেন অপসারিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে, নেতৃত্বদানকারী কেউ না থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে আওয়ামী লীগ এতবড় কর্মসূচি ঘোষণা করে দিল? এর পিছনে কোন অঙ্ক কাজ করছে? বাংলাদেশের ওয়াকিবহাল মহল এই বিষয়ে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। একদল বলছে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ব্যর্থ হবে, অন্যদলটি অবশ্য আরেকটি যুক্তি সাজাচ্ছে। আর আওয়ামী লীগের নেতারা আশাবাদী, বাংলাদেশের জনগন নিজেদের স্বার্থেই রাস্তায় নামবেন।
রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ বলছেন, এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের যা পরিস্থিতি তাতে এই ধরণের কর্মসূচি মানেই ব্যর্থতা। অপরদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা একে একে হুশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন। তাঁরা কোনও ভাবেই আওয়ামী লীগকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ। যেমন সারজিস আলম শেখ হাসিনাকে খুনি বলে সম্বোধন করে দাবি তুলেছেন তিনি ভারতে বসে বাংলাদেশকে ফের অশান্ত করার চক্রান্ত করছে। তাই জনগন যেন সেই প্রচেষ্টা রুখে দেয়।
প্রায় একই বক্তব্য বাংলাদেশের তদারকি সরকারের। বিশেষ করে মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব তাঁর এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে যেভাবে আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচির বিরোধিতা করেছেন তাতেই সমালোচনার ঝড় উঠছে। প্রশ্ন উঠছে যে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ নয়, তাঁদের কর্মসূচির বিরোধিতা কীভাবে করতে পারে একটি সরকার?
অপরদিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলের একাংশ অবশ্য দাবি করছেন, আওয়ামী লীগের অবরোধ – বিক্ষোভ বা হরতাল কিছুটা হলেও সফল হবে। কারণ এর আগে আওয়ামী লীগ শহীদ নূর হোসেন দিবসে যে মিছিল করেছিল তা ছিল রাজধানী ঢাকা কেন্দ্রিক। তাই সেটা আটকে দিতে পেরেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতারা। কিন্তু এবার তাঁদের কর্মসূচি গোটা বাংলাদেশ জুড়ে। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলাতেই এই সমস্ত কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। একটা বিষয়ে ভুলে গেলে হবে না, হাসিনা এখনও একজন জননেত্রী। তাঁর একটা অনুগত বাহিনী আছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের লক্ষ লক্ষ কর্মী-সমর্থক রয়েছেন। তাঁরা পরিবর্তিত বাংলাদেশে হয় চুপ করে রয়েছেন, না হয় আত্মগোপনে রয়েছেন। কিন্তু দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া ওই মানুষরা এবার বের হবেন রাস্তায়। পাশাপাশি বাংলাদেশের সিংহভাগ নাগরিকের মোহভঙ্গ হয়েছে তদারকি সরকারের প্রতি। কারণ, হাজার হাজার কলকারখানা বন্ধ, বেকার লক্ষ লক্ষ শ্রমিক। অন্যদিকে চাষিরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না, আবার নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশছোয়া। কর্মহীন প্রায় গোটা যুবসমাজ। নেই বিদেশী বিনিয়োগ। বিগত ছয় মাসে তেমন কোনও অগ্রগতি নেই বাংলাদেশে। ফলে জনসাধারণ কার্যত ক্ষেপে আছে ইউনূস ও উপদেষ্টাদের কাজকর্মে। এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের ডাকা আন্দোলনে তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। অপরদিকে আওয়ামী নেতারাও এবার ভয় কাটিয়ে বেরিয়ে আসবেন রাস্তায়। গ্রেফতার বরণ করতেও তাঁদের আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন অনেকে। কারণ, জননেত্রী হাসিনার আহ্বান ঠিক এমন সময় এসেছে, যখন ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাশাপাশি এসে গেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদি এই ফেব্রুয়ারিতেই মুখোমুখি বৈঠক করবেন। ফলে তদারকি সরকার বা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতারা যদি বল প্রয়োগ করে এই অবরোধ-হরতাল বন্ধ করার চেষ্টা করে তবে ফের বিশ্রীঙ্খল হবে বাংলাদেশ। সেটা ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র ভালোভাবে নেবে না, এটা ভালোভাবেই জানেন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা। আর দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বাংলাদেশী সাধারণ মানুষ ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন, হাসিনার আমলই ভালো ছিল। তাই তাঁরাও নামবেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। ফলে বলাই যায়, হাসিনার কুশলী চালে কুপোকাত হতে পারেন মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাঁর দলবল
Discussion about this post