বাংলাদেশের ঢাকা শহরের শ্যামপুরের কদমতলী বালুর মাঠে ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক এক কর্মশালার আয়োজন করেছিলে বিএনপি। সেখানে ভার্চুয়াল মাধ্যমে ভাষণ দিয়েছিলেন বিএনপি’র কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আর সেই ভাষা নেই তিনি বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন চেয়ে মুহাম্মদ ইউনূসের তদারকি সরকারকে কার্যত ঘিরলেন চক্রব্যুহে। পাশাপাশি তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র নেতাদেরও ঘুরিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন। তার কথায়, “যদি নির্বাচন প্রক্রিয়া দেরি হয়, যদি সংস্কার সংস্কার করে আমরা সংস্কারের আলোচনা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করতে থাকি তাহলে সেই স্বৈরাচার সুযোগ পেয়ে যাবে আবার দেশের মানুষের কাঁধে চেপে বসার”।
তিনি আরও বলেন, যে সকল বিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ, সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ যারা সংস্কারের কথা বলছেন, আপনাদের সকলের কাছে রাজনৈতিক দলের অবস্থান থেকে আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, সংস্কার সংস্কার বক্তব্য রেখে এই আলাপ দয়া করে দীর্ঘায়িত করবেন না। কারণ আপনারা সংস্কারের আলাপ যত দীর্ঘায়িত করবেন দেশ ততবেশি সংকটের মুখে পড়বে, আপনারা সংস্কার আলাপ যত দীর্ঘায়িত করবেন দেশে তত ষড়যন্ত্রকারীরা ষড়যন্ত্র করার সুযোগ পাবে।
রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত, বিএনপি নেতা তারেক রহমান শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের জুজু দেখিয়ে তদারকি সরকার ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বকে কার্যত খোলা চ্যালেঞ্জ দিলেন। উল্লেখ্য প্রথম থেকেই বিএনপি বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন চেয়ে আসছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন -সহ বাংলাদেশের সংবিধান, পুলিশ প্রশাসনের মতো একাধিক বিষয়ে সংস্কার চেয়ে কয়েকটি কমিশন গঠন করেছিলেন মুহাম্মদ ইউনূস। ওই কমিশনগুলি একে একে তাদের প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিলেও তা নিয়ে কাঁটাছেঁড়া চলছে। মুহাম্মদ ইউনূস ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একটি সর্বদলীয় বৈঠক সেরেছেন। ওই বৈঠকে বিএনপি প্রথম থেকেই প্রতিনিধিত্ব করতে চাইছিল না। পরে অবশ্য একজনকে পাঠানো হয়। মূলত বিএনপি’র বাধাতেই ভেস্তে গিয়েছিল সেই বৈঠক। বিএনপি’র বক্তব্য একটি স্থায়ী সরকার নির্বাচিত হলে তারাই দেশের সংস্কার সাধন করবে। যা নিয়ে বাংলাদেশের প্রথম সারির রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তদারকি সরকারের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। একইভাবে দূরত্ব সৃষ্টি হয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বের সঙ্গেও। ইতিমধ্যেই বিএনপি বেশ কয়েকটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, যা কার্যত আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মতই।
এদিন তারেক রহমানের বক্তব্যেও ওই বিষয়টি ফুটে ওঠে। তারেক রহমান বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে যাদের জনগণ দায়িত্ব দেবে, সংস্কারের কাজ তারাই শুরু করতে পারবে। তাদের শুরু করতেই হবে। কারণ, যারা নির্বাচিত হয়ে আসবে, তারা জনগণের কাছে ওয়াদা করবে যে তারা সুযোগ পেলে বাস্তবায়ন করবে এই সংস্কার।
কার্যত তলানিতে পৌঁছে যাওয়া বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য তারেক রহমান ঘুরিয়ে দায়ী করেন মুহাম্মদ ইউনুসকে। তাঁর কথায়, জনগণের ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করতে পারলে সেই সরকার জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে বলে মন্তব্য করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, কারণ, পাঁচ বছর পর আবার জনগণের কাছে যেতে হবে। কাজেই যে প্রতিজ্ঞা জনগণের সামনে করে ক্ষমতায় আসবে, তাদের সেই কাজগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়ানের কাথা বলে ৭০ টাকা কেজি চাল খাওয়ালে ৫ আগস্টের মতো অবস্থা হবে।
প্রসঙ্গত তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরেই লন্ডনে রয়েছেন। তিনি কবে দেশে ফিরবেন, বা সরকারিভাবে বিএনপির দায়িত্ব নেবেন সেটা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা কাটেনি। তবে তাঁর বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, তাঁর মা বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হলেই একসাথে বাংলাদেশে ফিরবেন।
Discussion about this post