হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, শুভ শক্তির কাছে সবসময়ই হার মেনেছে অশুভশক্তি। একথা বোঝাতে নৃসিংহ অবতারের আবির্ভাব হয়েছিল। তাই মনে করা হয়, সংসার থেকে অশুভ ছায়াকে সরাতে নৃসিংহ দেবের পুজো করে থাকেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। শাস্ত্র মতে, এই পুজোর উপবাস করলে নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় সহজেই। নানা অচলাবস্থা কেটে জীবনে শান্তি ফিরে আসে। অনেকে নৃসিংহ দেবের সঙ্গে ধনদেবী শ্রী লক্ষ্মীর পুজোও করে থাকেন। মূলত, বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে এই অবতারের পুজো করা হয়। কিন্তু চলতি বছর নৃসিংহ চতুর্দশী তিথি পড়েছে বাংলার জৈষ্ঠ্য মাসে। অর্থাৎ ইংরাজী বছরের মে মাসের ২১ তারিখে। বুধবার চতুর্দশী লাগবে বিকেল ৫টা ৩০ মিনিট থেকে ,যা শেষ হবে বৃহস্পতিবার ২২ শে মে সন্ধ্যা ৬টা ৫৬ মিনিটে। জানেন কি, অন্যান্য পুজোর থেকে এই নৃসিংহ চতুর্দশী ব্রত পালনের নিয়ম খুবই কঠোর। এক ঝলকে দেখে নেব ব্রত পালনের বেশ কিছু নিয়ম রীতি। কিন্তু কীভাবে শুরু হয়েছিল এই ব্রত।
পুরাণ মতে, ঋষি কাশ্যপ ও তাঁর স্ত্রী দিতির দুই সন্তান হয়। একজনের নাম হিরণ্যকশিপু ও অপরজন হিরণ্যাক্ষ। একদিন ভগবান ব্রহ্মাকে সন্তুষ্ট করার জন্য দুই ভাই তপস্যা শুরু করেন। তপস্যায় তুষ্ট হয়ে ব্রহ্মা তাঁদের বর প্রদান করেন। পৃথিবীর প্রায় কোনও জীব এবং অস্ত্র এমনকি দেবতারাও তাদেরকে হত্যা করতে পারবেন না। ব্রহ্মার এমন বর পেয়ে সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড দাঁপিয়ে বেড়াতে থাকে তাঁরা। ব্রহ্মাণ্ডে সেই সময় ব্রহ্মার সকল সৃষ্টিকে নির্বিচারে ধ্বংস করতে থাকে ঋষি কাশ্যপের দুই পুত্র। হত্যালীলায় মগ্ন হয়ে তাঁদের নজর পড়েছিল স্বর্গের দিকে।
অন্যদিকে, হিরণ্যকশিপুরের এক সন্তান ছিল, নাম প্রহ্লাদ। তিনি ছিলেন শ্রী বিষ্ণুর পরম ভক্ত। যেহেতু প্রহ্লাদ ছিলেন বিষ্ণুর একনিষ্ঠ ভক্ত, তাই তাঁর সন্তাকে হত্যা করতে দু-বার ভাবেনি হিরণ্যকশিপু। নানা ভাবে প্রহ্লাদকে মারার চেষ্টা করে সে। কিন্তু বারংবার প্রহ্লাদ তাঁর পিতার রোষের হাত থেকে বেঁচে যায়। একদিন, হিরণ্যকশিপুরের বোন হোলিকাও প্রহ্লাদকে মারার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। ভেবেছিলেন, প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে সে আগুনে ঝাঁপ দিলে, প্রহ্লাদ আগুনে পুড়ে যাবে। এদিকে হোলিকা ব্রহ্মার বরদানে পাওয়া শালের জোড়ে বেঁচে যাবে। কিন্তু সে সবই সার। আগুনে ঝাঁপ দেওয়ার মুহূর্তে হোলিকার গায়ের শাল চলে যায় বিষ্ণুভক্ত প্রহ্লাদের গায়ে। ফলে প্রহ্লাদের গায়ে একটুও আগুনের আঁচ লাগেনি কিন্তু অগ্নিদ্বগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় হোলিকার। তখন কাশ্যপ পুত্রদের থামাতে শ্রীবিষ্ণু বরাহ অবতার রূপ ধারণ করে আপন নখ দিয়ে হিরকণ্যকাশ্যপুকে হত্যা করেন। তারপর পৃথিবীতে আবারও শান্তি ফিরে আসে। এরপর থেকে সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে নৃসিংহ দেবের আবির্ভাবের কথা ছড়িয়ে পড়ে, এরপর থেকেই শুক্লপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে নৃসিংহ দেবের আবির্ভাব তিথি হিসাবে পালন করে থাকেন মহিলারা।
স্নান সেরে পরিষ্কার কাপড় পড়ুন। এরপর সারা দিন উপবাস করে থাকতে হবে।
নৃসিংহ অবতারের সঙ্গে শ্রী লক্ষ্মীর পুজো করা উচিত। পুজো শেষে অবশ্যই নৃসিংহদেব ও মাতা লক্ষ্মীকে নারকেল, মরশুমি ফল, মিষ্টি ও কেশরের নৈবেদ্য প্রদান করুন।
উপবাস চলাকালীন কখনওই দানা শষ্য ও গমের কাবার খাবেন না। এতে নৃসিংহদেব রুষ্ট হন।
উপবাস থাকাকালীন সবসময় নৃসিংহদেবের বন্দনা মন্ত্রোচ্চারণ করুন।
পুজো শেষে সামর্থ মতো দুঃস্থ ব্যক্তিকে পোষাক, খাদ্য এবং ধাতু দান করুন। এই দান অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয়।
Discussion about this post