বাংলাদেশের ভবিষ্যত কি, ঠিক করবে ভারতই। আপনাদের মনে আছে নিশ্চই গত জানুয়ারি মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বার শপথ নেওয়ার পরই ওয়াশিংটনের ওভাল অফিসে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মোদিকে পাশে বসিয়েই প্রক্যাশ্য সাংবাদিক সম্মেলনে ট্রাম্প বলেছিলেন, বাংলাদেশের বিষয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বছর ঘুরতে চলল, কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি কোনও রকম পরিবর্তন হয়নি। ফলে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি মোদি একক সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না? মুহাম্মদ ইউনূস যখনই সুযোগ পেয়েছেন, তখনই তিনি ভারতের বিরুদ্ধে নানা উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখেছেন। এখনও তিনি সেই চেষ্টা করে চলেছেন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ভারত নিশ্চুপ রয়েছে। ফলে মোদি এবং কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নিরবতা নিয়ে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন। বিশেষভাবে যথন দিল্লির লালকেল্লার কাছে ভয়াবহ বিস্ফোরণ এবং হরিয়ানার ফরিদাবাদে বিপুল পরিমান বিস্ফোরক উদ্ধারের পর এনআইএ তদন্তে বাংলাদেশের যোগসুত্র সামনে আসতে শুরু করেছে। তাহলে কেন মোদি সরকার এতটা নিশ্চুপ?
আসলে এর পিছনে রয়েছে একটা বড় কূটনৈতিক কারণ। আজকের বাংলাদেশ জন্মই হয়েছিল ভারতীয় সেনার সরাসরি যুদ্ধে। ১৯৭১ সালে ভারত সরাসরি যুদ্ধ করেছিল পাকিস্তান সেনার সাথে। সে বছরই ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের তৎকালীন জেনারেল নিয়াজি ৯৩ হাজার সেনাবাহিনী নিয়ে ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। যা পৃথিবীর যে কোনও যুদ্ধের ইতিহাসে স্মরণীয় একটা আত্মসমর্পণ। সেবারই জন্ম হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের। এরপর ৫৪ বছর পেরিয়েছে, গঙ্গা ও পদ্মা দিয়ে বহু জল প্রবাহিত হয়েছে। কিন্তু ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছিল। তবে প্রচলিত এই মিথ ভাঙতে শুরু করে গত বছর বাংলাদেশে এক তথাকথিত গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে। কারণ, মুহাম্মদ ইউনূসের এই অন্তর্বর্তী সরকার স্বাভাবিক নিয়মে বাংলাদেশের ক্ষমতায় বসেননি। মার্কিন ডিপ স্টেট এবং পাকিস্তানের আইএসআইয়ের সাহায্যে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়তে ইসলামীর মিলিত ষড়যন্ত্রেই ক্ষমতায় আসেন ইউনূস এবং তাঁর প্রশাসন। ফলে এর পরবর্তী সময় বাংলাদেশে যা হয়েছে তার সবটাই ঘটছে পাকিস্তানের অঙ্গুলিহেলনে।
একদিকে মুহাম্মদ ইউনূসের একের পর হুমকি। অন্যদিকে তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের মদতে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনা এবং গুপ্তচর সংস্থার দাপাদাপি ভারতের নজর এড়ায়নি। ফলে ভারত চুপ করেও বসে নেই। যেটা জানা যাচ্ছে, ভারত এবার কেবলমাত্র পাকিস্তান সীমান্ত নিয়ে চিন্তিত নয়। মোদি সরকার সমান গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ সীমান্তেও। পাকিস্তানের স্যর ক্রিক এবং আরব সাগর ছাড়াও রাজস্থানের মরু অঞ্চল, কাশ্মীরের উচ্চ পাহাড়ি অঞ্চলে ভারতীয় সেনা ক্রমাগত যুদ্ধ মহড়া দেওয়ার পাশাপাশি সে দেশের উপর কড়া নজরদারি রাখছে। একই রকমভাবে ভারতের পূ্র্ব প্রান্তে আপাতনিরীহ বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকাতেও ভারত বিপুল পরিমান সৈন্য সমাবেশ করেছে। বাংলাদেশকে ঘিরে থাকা ভারতের সীমান্ত পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ত্রিপুরা ও মিজোরামে বিপুল পরিমান সৈন্য মোতায়েন করেছে ভারত। সেই সঙ্গে এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমস এবং অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ রাফাল ও এস-৩০ এমকেআই মোতায়েন করে রেখেছে ভারতীয় বিমানবাহিনী।
অর্থাৎ যে কোনও পরিস্থিতিতে ভারত নামমাত্র সময়ে যাতে অপারেশনে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে সেই ব্যবস্থা পাকা করে রেথেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। ভারতের স্থলসেনা এবং বায়ুসেনার পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরে ভারতের নৌসেনাও মোতায়েন রয়েছে পূর্ণ অগ্রাধিকারে। সবমিলিয়ে বাংলাদেশের নাকের ডগায় ভারত তৈরি রয়েছে যে কোনও স্ট্রাইক করার জন্য। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে ভারত কি তা করবে? বিশ্লেষকরা দাবি করছেন, কয়েকদিন আগে দিল্লিতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানকে একটি তথ্যপ্রমান সম্বলিত ফাইল বা ডসিয়র দিয়েছিলেন। তাতে বাংলাদেশে চালু থাকা পাকিস্তানের জঙ্গি মডিউলগুলির যাবতীয় তথ্য দেওয়া ছিল। যদি ইউনূস সরকার সেই মিডিউলগুলি নিষ্কৃয় করতে কোনও ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ভারতই করবে। অর্থাৎ অপারেশন সিঁদুরের দ্বিতীয় পর্যায় পাকিস্তান ও বাংলাদেশে একযোগে চলতে পারে। এমনটাই মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা।












Discussion about this post