তৃণমূলে থাকাকালীন দলে উপযুক্ত মর্যাদা পাননি। বরাবরই বিরোধিতা করে এসেছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেই তাপস রায়ই উত্তর কলকাতার বুকে এখন বড় চ্যালেঞ্জ তৃণমূলের কাছে। তিনি উত্তর কলকাতার প্রার্থী। তাঁর রাজনৈতিক জীবন দীর্ঘকালের। একসময় প্রয়াত নেতা সোমেন মিত্রর অন্ধ অনুরাগী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তৃণমূল স্তর থেকে করেছেন রাজনীতি। ছাত্র রাজনীতি দিয়ে শুরু। ছিলেন ছাত্র পরিষদের সভাপতি। যুব কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে তাঁর নাম একসময় জোরাল হলেও বাদ পড়েছিলেন সম্ভাব্য পদ থেকে। তিনি বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়।
ভোটের মুখে দল বদল করেছেন তাপস। তবে টিকিট না পেয়ে নয়। দল বদলের সময় মনের মধ্যে জমে থাকা একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলেন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডি হানা দেয় তাপস রায়ের বাড়িতে। তাঁর স্বচ্ছ ভাবমূর্তিতে কালি লাগানোর চেষ্টাকে মেনে নিতে পারেননি তিনি। দলের অন্দরে ও বাইরে ফুঁসে উঠে ছিলেন। সরাসরি অভিযোগ এনেছিলেন তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। সুদীপের কলকাঠির জেরেই তাঁর বাড়িতে ইডি। দাবি ছিল তাপসের। ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একবারও তাঁর খোঁজ না নেওয়ায়। শাহজাহানের মত জলদস্যুদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন নেত্রী। অথচ তাঁর বাড়িতে ইডি হানার বিপক্ষে একটি শব্দও খরচ নয়। কেন? প্রশ্ন তুলেছিলেন। তৃণমূলের এই উদাসীনতায় বুঝে নিয়ে ছিলেন দলে তাঁর প্রয়োজন ফুরিয়েছে। এত অসম্মানের পর তৃণমূল করা রীতিমত নিজের সম্মানের সঙ্গে আপোস করা বৈ আর কিছু নয়।
জোড়াফুলের তাপস এখন পদ্মফুলে। তাপসের আগমণে উত্তর কলকাতা কেন্দ্রে এক শক্তপোক্ত প্রার্থী পেয়ে গেল বিজেপি। তাঁদের দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণ হল। তবে অনেকেই উত্তর কলকাতায় সুদীপ না দাঁড়ালে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে তাপস রায়কে বিজেপির প্রার্থী করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তাপস রায়ের সঙ্গে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। কখনও সাদা হাতি, কখনও পরজীবী নামে সুদীপকে বার বার আক্রমণ করেছেন তাপস। উল্টো দিকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় থেকেছেন নিশ্চুপ। কোন প্রকার জন সংযোগ নেই, সাধারণ মানুষ তো দুর দলের অন্দরেও সুদীপকে পাশে পাওয়া যায় না। খালি অন্যের ভরসায় রাজনীতি করে চলেন। গাল ভরা শুধু নাম, কাজে কর্মে বিগ জিরো। অকপট তাপস সুদীপ বিরোধিতায় কোন খামতি রাখেননি। অনেকেই মনে করেন পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ তাপসের অভিযোগগুলি নিতান্ত অমূলক নয়। সুদীপ বিরোধিতায় বরাবর কুণাল ঘোষকে পাশে পেয়েছেন তাপস। তাপসের প্রশংসা করে নিজের পদও খুঁইয়েছিলেন কুণাল। তাপস নামে নো আপস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের অবস্থান অনেকটা এইরকমই।
কেন, তার কারণ অজানা। তবে এই তাপস রায় ছিলেন অন্যতম একজন যিনি তৃণমূলের শুরুর আগে মমতার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সিপিআইএমের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে নতুন দল গঠণের ঘোষণা করেছিলেন মমতা। সালটা ছিল ১৯৯৭। মমতার এই সিদ্ধান্তে দল থেকে নেত্রীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় কংগ্রেস। বিরোধিতা করেছিলেন তাপস।বলেছিলেন এতে আখেরে লাভ হবে মমতারই। শোনেনি সোমেন মিত্ররা। তৃণমূল গঠনের পর এরপর অজিত পাঁজার মধ্যস্থতায় দল পরিবর্তন করে ঘাসফুলে ভেড়েন তাপস। সেই থেকে একটানা তৃণমূলে ছিলেন। একবারও দল পরিবর্তন করেননি। ২০০১ সালে তৃণমূলের টিকিটে বড়বাজার কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হন। তাঁর হাত ধরেই অত্যন্ত প্রেস্টিজিয়াস সিট বরানগর বিধানসভার ভোটে জোড়াফুল ফোটে। একসময় এই কেন্দ্র থেকে জিততেন জ্যোতি বসু। তবু দলে সেভাবে মর্যাদা মেলেনি। ২০১৬ সালে প্রতিমন্ত্রীর পদ পেয়ে ছিলেন। উত্তর কলকাতার সাংগঠনিক জেলা সভাপতি হয়েছিলেন।
পরে সরিয়ে দিয়ে সেই পদে পুনরায় আনা হয় সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাঁর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির বলে বড় পদ অনায়াসে পেতে পারতেন। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাতকারণে কোনদিন তাঁকে সেই মর্যাদা দেওয়া হয়নি। একবার এক সাক্ষাৎকারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একসময়ের ছায়াসঙ্গী সোনালী গুহ বলেছিলেন দিদি বরাবরই ইগোর লড়াই জারি রেখেছিলেন তাপস রায়ের বিরুদ্ধে। এই দাবি যদি সত্যি হয় তবে কী তৃণমূলে থেকে বরাবর ইগোর বলি হয়েছেন তাপস?
Discussion about this post