পাহাড়ে ঘুরতে কার না ভালো লাগে। গ্রীষ্মের দাবদাহ কাটিয়ে মাস খানেকের মধ্যেই বঙ্গে প্রবেশ করবে বর্ষা। গরমে অনেকেরই পাহাড়ে যেতে মন চায়। একটু ঠাণ্ডা হিমেল বাতাস, একটু বরফের ছোঁয়া, পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা, ঘনও সবুজ বন এইসব দেখার সাধ কার না থাকে। তবে বর্ষাতেও কিন্তু পর্যটকেরা পাহাড় ভ্রমণে বেরিয়ে পরেন। বিশেষ করে রাজ্যের বাইরে অন্য রাজ্যেও যান অনেকে। যেমন মহারাষ্ট্র, এখানেই আছে ঘন সবুজ বন, পাহাড়ি হ্রদ, পাহাড়ি ঝর্ণা , মন্দির গুহা প্রভৃতি। তাই আগত বর্শাতেও ভ্রমণ পিপাসু মানুষরা একটু ফাঁক বুঝে ঘুরে আসতেই পারেন। অন্য রাজ্যের কথা ল এলেই প্রথমে নজরে আসে সব থেকে ধনী শহর মহারাষ্ট্রের দিকে। এই মহারাষ্ট্র রাজ্যেই অবস্থিত কামশেত যেনো স্বর্গরাজ্য। বিশেষ করে বছরের একটি নির্দিষ্ট ঋতুতে এই স্থান সেজে ওঠে অপরূপ সাজে। যেনো একটি রূপবতী কন্যা। মুম্বাই থেকে মাত্র তিন ঘন্টার দূরত্বে অবস্থিত এই শহরটি।
শৈলশহর কামশেতে একধিক মন্দির আছে। এমনকি এই শৈলশহরে একাধিক প্রাচীন গুহাও রয়েছে। পাহাড়ের উপর নিচে একাধিক মন্দির স্থাপিত। বিশেষ করে দেবাদিদেব মহাদেবের মন্দির এখানে রয়েছে।
ইতিহাস ও স্থাপত্যের দিক থেকে এই রাজ্য অনেকটাই এগিয়ে। মহারাষ্ট্র ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। ছত্রে ছত্রে এই রাজ্যে বিভিন্ন স্থাপত্য ও ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখা যায়। বহু প্রাচীন লোহাগড় দুর্গ অবস্থিত মহারাষ্ট্র শহরের কামশেত পুর শহরে। এখানে একাধিক হ্রদ রয়েছে। আপনি যদি বর্ষাতে এখানে ঘুরতে যান তাহলে অপরূপ সৌন্দর্যের পাশাপাশি বিশাল জলধারাও দেখতে পাবেন। তাছাড়া একাধিক প্রাচীন দুর্গের উপর দিয়ে চারপাশের সবুজে ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে পাবেন।
বিশাল সংখ্যক প্রাচীন গুহা অবস্থিত এখানে। একটা সময় পাহাড় কেটে বহু গুহা তৈরি হয়েছিল। তাছাড়া আপনি যদি গুহাতে ট্রেকিং করেন তাহলে অবশ্যই বুদ্ধ গুহাতে ট্রেকিং করুন। কারণ প্রাচীন বুদ্ধ গুহা থেকে আশেপাশের মনোরম পরিবেশ দর্শন করতে পারবেন। তাছাড়া শৈলশহরের একাধিক জায়গায় বিভিন্ন ভাস্কর্য ও স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন পাওয়া যাবে।
শৈলশহরের আকর্ষণীয় জিনিসটি হলো প্যারাগ্লাইডিংয়ের ব্যবস্থা। একাধিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত এই শহরে। বেশ কিছু শিক্ষণীয় স্থানও রয়েছে এখানে। সব থেকে ভালো ব্যবস্থা হলো প্যারাগ্লাইডিংয়ের প্রশিক্ষণ।বর্ষার মরশুমে এই শৈলশহরও সেজে ওঠে অপরূপ ভাবে। বর্ষাতে এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এতটাই বেড়ে যায়যে তার থেকে চোখ ঘোরানো যায়না। পাহাড়ি ঝর্ণা আরো প্রবল ভাবে, অঝোরে প্রবাহমান হয়।
বিশেষ করে জলপ্রপাত গুলি এইসময় জলে পরিপূর্ণতা পায়। শৈল শহরের কয়েকটি বিখ্যাত জলপ্রপাতের নাম ,ভাজে জলপ্রপাত, মালভালি জলপ্রপাত। বর্ষাতে জলমগ্ন থাকে জলপ্রপাতগুলি। একঘেয়েমি জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য , এবং যাবতীয় ক্লান্তিকে দূর করার জন্য, এই অঞ্চলে ভ্রমণে যেতেই পারেন। বিশেষ করে এই জলপ্রপাত গুলি যখন নিচে প্রবাহিত হয় তখন তার সৌন্দর্য, গতিবেগ, আওয়াজ, মাধুর্য্য সব কিছুই আপনাকে যাবতীয় হতাশা, ক্লান্তিকে ভুলিয়ে দেবে।
হ্রদের সৌন্দর্য এখনের অন্যতম আকর্ষণীয় বস্তু। গ্রীষ্মের সময় এই হ্রদগুলি থাকে শুষ্ক, জলশুণ্য। কিন্তু বর্ষাতে এই হৃদ গুলিই হয়ে ওঠে জলমগ্ন। তাছাড়া হৃদের আশেপাশের পরিবেশও জল পেয়ে সবুজ, সুন্দর হয়ে ওঠে। এই স্থানে বোটিং -এর ব্যবস্থা আছে। ফলে একটু বর্টিং করে দিব্যি ঘুরতে পারেন এখানে। দারুন মনোরম পরিবেশে বেশ কয়েকদিন সয় নিয়ে গেলে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে পারবেন।
এছাড়া ‘হট এয়ার বেলুন’-র চড়ার বিশেষ সুবিধা আছে। আকাশ মেঘ মুক্ত থাকলে, প্যারাগ্লাইডিং থেকে শুরু করে আরো বিভিন্ন মজাদার রাইড করতে পারেন। সাথে গ্রীষ্ম ও বর্ষা উভয় ঋতুতে পর্যটকরা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মহারাষ্ট্রের ‘কামশেত’-এ ভ্রমণে আসতে পারেন প্রকৃতির সৌন্দর্যকে চাক্ষুষ করার জন্য।
Discussion about this post