তিনি সায়নী ঘোষ। কেরিয়ারের শুরুটা অভিনয় দিয়ে হলেও অভিনেত্রীর তকমাটা গা থেকে ঝেড়েই ফেলেছেন প্রায়। মাঝে মধ্যে দু-একটি ওয়েব সিরিজে মুখ দেখালেও আগের মত আর টিভির পর্দায় তাঁকে দেখা যায় না। বরং তিনি রাজনীতিতেই ব্যস্ত থাকেন বেশি। ২০২১ এর ২৪ এ ফেব্রুয়ারি বিধানসভা ভোটের আগে আগে তৃণমূলে যোগদান করেন সায়নী। সেইবছরই কাঞ্চন মল্লিক, রাজ চক্রবর্তী, জন মালিয়া, সুদেষ্ণা রায়ের মত বিশিষ্টরা জোড়াফুলে ভেড়েন। তবে বলাবাহুল্য সকলের মাঝে সায়নী নজর কেড়েছেন সব থেকে বেশী।
তাঁর একটাই কারণ। তিনি রাজনীতিতে সময় দেন অনেকটাই বেশী। মানুষের পাশে থাকতে চান। মানুষের হয়ে কাজ করতে চান। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে দল সায়নী ঘোষকে দক্ষিণ আসানসোল থেকে দাঁড় করায়। বিজেপির অগ্নিমিত্রা পলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে হেরে যান সায়নী। তবে হাল ছেড়ে দেননি। শুরু হয়ে যায় সায়নীর অভিনেত্রী থেকে নেত্রী হয়ে ওঠার লড়াই। দক্ষিণ আসানসোলের মানুষ ভোটে তাকে প্রথম পছন্দ না করলেও সায়নী থেকেছেন মানুষের পাশে। কোভিড, লক ডাঙনের সময় বার বার ছুটে গিয়েছেন। মানুষের অসুবিধার কথা শুনেছেন, ত্রাণ বিলি করেছেন। দল ও রাজ্যবাসীকে বুঝিয়েছেন তিনি মাটি কামড়ে পড়ে থাকার মানুষ। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে ফল ঘোষণার পর দলের তরফে তাঁকে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়। রাজ্য তৃণমূলের যুব সভানেত্রী হন সায়নী ঘোষ। সায়নীর আগে এই পদে ছিলেন অভিষেক। তিনি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে উন্নীত হন।
তৃণমূলে যোগদানের আগে বাম ঘেষা মানুষ হিসেবেই তাঁকে লোকে চিনতেন। তার দুটি জ্বলন্ত উদাহরণও রয়েছে। চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমার পোস্টারের বদলে মমতা ব্যানার্জির পোস্টার কেন সেই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। পরিচালক অনীক দত্তের ভবিষ্যতের ভূত সিনেমাটি হল না পাওয়ায় তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে তাঁকে পথে নামতে দেখা গিয়েছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জোড়াফুলের সঙ্গে রয়ায়ন বদলে যায় সায়নীর। সমাজ মাধ্যমে বিজেপির জয় শ্রীরাম স্লোগানের বিরোধিতা করেন নেত্রী। পড়েন গেরুয়া শিবিরের রোষানলে। জয় শ্রীরাম স্লোগান নিয়ে বিজেপির সঙ্গে বাগযুদ্ধ চলাকালীন সায়নীর পোস্ট করা একটি পুরনো টুইট তুলে এনেছিলেন বিজেপির প্রবীন নেতা তথাগত রায়। যেখানে শিবলিঙ্গে কন্ডোম পরানো এক মহিলাকে বুলাদি বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। হিন্দু ধর্মের অপমান বলে রে রে করে উঠেছিল বিজেপি। মামলা গড়ায় আদালত পর্যন্ত। সেই সময় সায়নীর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন মমতা। তারপর থেকে সায়নী ও তৃণমূলের পরিবর্তিত রসায়ন নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়।
এখন তিনি তৃণমূল নেত্রী। রাজনীতিতে ঠোঁঠকাটা, স্পষ্ট বক্তা হিসেবে পরিচিতি তাঁর। দলের সংগঠনে অন্যতম ভরসা। বলাবাহুল্য তাঁর হাবে ভাবে, চালচলনে অনেকেই মমতার ছায়া দেখতে পান। মাঝে মধ্যে সায়নী ঘোষকে সাদা শাড়িতে জনসভা, দলের কাজে দেখা যায়। সরু পাড়ের সাদা শাড়ি মুখ্যমন্ত্রীর মমতার যে প্রধান স্টাইল স্টেটমেন্ট রাজনীতি ও রাজনীতির বাইরে বাংলার প্রতিটা মানুষ জানেন। অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে যাদবপুর থেকে তৃণমূলের প্রতীকে দাঁড়িয়েছেন সায়নী। বৃহস্পতিবার শেষ দফার প্রচারে মমতার পাশে দেখা যায় সায়নী ঘোষ ও মহুয়া মৈত্রকে। অর্থাৎ রাজনীতিতে যারা প্রতিবাদী, ঠোঁঠকাটা বলে পরিচিত তাদেরকে পাশে রেখেই শেষ হয় মমতার প্রচার। বিধানসভা ভোটে জিততে পারেননি সায়নী। এবার কি সাংসদ হওয়ার দৌঁড়ে সৃজন, অনির্বাণদের পেছনে ফেলে দেবেন তিনি। প্রতীক্ষা ৪ ঠা জুনের
Discussion about this post