দীর্ঘদিন ধরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূলের প্রথমসারির নেতারা ১০০ দিনের কাজ ও আবাস যোজনার টাকা নিয়ে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ করে আসছেন। লোকসভা ভোটের আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজ্য সরকার নিজ তহবিল থেকে ১০০ দিনের টাকা শ্রমিকদের মেটাতে শুরু করে। লোকসভা ভোটের মধ্যে এবার আবাস যোজনার টাকাও উপভোক্তাদের মিটিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করল বলে নবান্ন সূত্রে খবর। সেই লক্ষ্যে একটি পোর্টাল চালু করতে চলেছে রাজ্য সরকার। জানা যাচ্ছে ভোটপর্ব মিটতেই আবাস যোজনার টাকা উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে দিতে শুরু করবে রাজ্য সরকার। বিরোধীদের প্রশ্ন. রাজ্যের অর্থভাণ্ডারের হাল যখন বেহাল, বিশাল ঋণের বোঝা মাথায় নিয়েও কেন একের পর এক জনমুখী ঘোষণা করছে তৃণমূল সরকার?
রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, ১০০ দিনের কাজের টাকা মেটাতে রাজ্যের খরচ হয়েছে কমবেশি ৬৫০ কোটি টাকা, আবাস যোজনার ক্ষেত্রেও কয়েকশো কোটি টাকা খসবে রাজ্যের কোষাগার থেকে। এছাড়া কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে প্রায় ২৬ হাজার চাকরিহারা শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের বেতনও মিটিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। বিরোধীদের বক্তব্য, কেন্দ্রের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে রাজ্যের কোষাগারের হাড়ির হাল করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্লেখ্য, লোকসভা ভোটের প্রচারে বর্তমানে উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গ চষে বেরাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর প্রতিটি জনসভাতেই তাঁরা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ১০০ দিনের কাজ ও আবাস যোজনার টানা না দেওয়া নিয়ে তোপ দেগে চলেছেন। পাশাপাশি ১০০ দিনের প্রকল্পের টাকা যে রাজ্য সরকারই মেটাচ্ছে সেটাও ফলাও করে প্রচার করছেন তৃণমূলনেত্রী। এবার আবাস যোজনার টাকা মেটানোর প্রতিশ্রুতিও দিলেন তিনি। রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত, একাধিক দুর্নীতির ইস্যুতে কার্যত দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে শাসকদলের। তাই চাপ কমাতে ১০০ দিনের কাজ এবং আবাস যোজনার টাকা মেটানোর দাবি করেই বিজেপির বিরুদ্ধে রণকৌশল সাজিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
অপরদিকে বিজেপির দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারকে হেয় করতে ক্রমাগত মিথ্যা রটাচ্ছে তৃণমূল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলায় একাধিক জনসভায় দাবি করেছেন, কেন্দ্র বিভিন্ন প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ১০ লক্ষ কোটি টাকা দিয়েছে। কিন্তু সেই টাকার কোনও হদিশ নেই। প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, বেশিরভাগ টাকাই তৃণমূল নেতাদের পকেটে ঢুকেছে। উল্লেখ্য, বিভিন্ন রিপোর্ট অনুযায়ী রাজ্য সরকারের ঋণের বোঝা ইতিমধ্যেই ৭ লক্ষ কোটি ছুঁতে চলেছে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে তা ছিল ৫ লক্ষ ৭৪ হাজার কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমান ঋণের সুদ দিতেই রাজ্যের কোষাগারের হাড়ির হাল হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে চাকরিহারা শিক্ষকদের বেতন ও আবাস যোজনার টাকা যোগ হলে রাজ্যের আর্থিক সঙ্কট আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজ্যের নিজস্ব আয় কম কিন্তু ব্যায় বেশি। এই অবস্থায় কোষাগারে বাড়তি বোঝা চাপিয়ে রাজ্যকে ক্রমশ আর্থিকভাবে পঙ্গু করে তুলছে তৃণমূল সরকার। একযোগে এমনটাই দাবি করছে বিরোধীদলগুলি।
ব্যুরো রিপোর্ট নিউজ বর্তমান
Discussion about this post