আগামী ১ জুন হবে সপ্তম দফায় রাজ্যের ৯ লোকসভা আসনে ভোট গ্রহণ । মূলত দেশের সাধারণ নির্বাচনের শেষ দফা ওইদিন। ইতিমধ্যে প্রথম দফার ভোট সম্পন্ন হয়েছে। শেষ দফার ভোট হতে আর একমাসের বেশি কিছুদিন বাকি রয়েছে। শেষ দফায় যে আসনগুলিতে ভোট গ্রহণ হবে সেগুলির মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট আসনটি। কারণ কয়েক মাস আগে এই কেন্দ্রে ঘটে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন ফেলে দেওয়া সন্দেশখালি কাণ্ড। বসিরহাটের সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে নারী নির্যান ও জমি দখলের অভিযোগে উত্তাল হয়েছে বঙ্গ রাজনীতি। বর্তমানে জেলে রয়েছেন সন্দেশখালির ‘কাগুজে বাঘ’। শাহজাহানের নামে তদন্তকারীরা কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির হদিশ পেয়েছেন। সন্দেশখালিতে শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভও রয়েছে সাধারণ মানুষের।
প্রসঙ্গত বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির তরফে প্রার্থী করা হয়েছে রেখা পাত্রকে। যিনি সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো প্রথম সারির মুখ। গেরুয়া শিবির প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণার পর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রেখা পাত্রকে ফোন করেছিলেন। শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি সন্দেশখালি আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে রেখাকে ‘শক্তিস্বরূপা’ বলে সম্বোধন করেছিলেন মোদি।
অন্যদিকে সিপিআইএম এই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে প্রাক্তন বিধায়ক এবং সন্দেশখালির ভূমিপুত্র নিরাপদ সর্দারকে। সন্দেশখালির ঘটনায় তাঁকে গ্রেফতার করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের পুলিশ। নিরাপদের বিরুদ্ধে উস্কানির অভিযোগ ছিল বলে দাবি পুলিশের। যদিও হাইকোর্ট নিরাপদ সর্দারকে জামিন দিয়ে দেয়। জামিন পাওয়ার পর বামফ্রন্ট নিরাপদ সর্দারকে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করে। টিকিট পাওয়ার পর জনসংযোগে বেরিয়ে তিনি দাবি করেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশ যেভাবে তাঁকে গ্রেফতার করেছে তাতে গোটা রাজ্যে তাঁদের আন্দোলন আরও শক্তিশালী হয়েছে। মূলত বসিরহাট লোকসভা এলাকায় বেশিরভাগ তফসিলি জাতি ও উপজাতি মানুষের বাস। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই আসনে বাম প্রার্থী ভালোই লড়াই দেবেন, কারণ কংগ্রেস আলাদা করে এই আসনে প্রার্থী দেয়নি। তারা নিরাপদকে সমর্থন করবে।
রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে বসিরহাটে প্রার্থী করা হয়েছে দলের পুরনো দিনের কর্মী হাজি নুরুলকে। যিনি ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বসিরহাটের সাংসদ ছিলেন। ২০১৬ সালে হাড়োয়ার বিধায়ক হন। তৃণমূল কংগ্রেস তাঁকেই এবছর বসিরহাট থেকেই লোকসভা ভোটে লড়ার জন্য টিকিট দিয়েছে। ১৯৯৭ সাল থেকে তাঁর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পথচলা। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, যতই পুরনো দিনের নেতাকে তৃণমূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনীত করুক। আসন্ন ভোটের আগে মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে শাহজাহান ও শিবুর মতো নেতাদের জন্য, তার প্রভাব ভোটবাক্সে পড়বে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এবারের লোকসভা ভোটে বসিরহাট কেন্দ্রে সন্দেশখালি-কাণ্ড একটা ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে। তাই তৃণমূল কংগ্রেসকে হারিয়ে রেখা পাত্র বা নিরাপদ সর্দার জয়ী হলে, তা অবাক হওয়ার মতো ঘটনা হবে না।
Discussion about this post