রাজ্যে হিন্দুত্বের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি এমন যে তৃণমূলকে রামনবমী, হনুমান জয়ন্তী পালন করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর সন্ত্রাসী হামলা এবং পরিকল্পিত হিন্দু নিধন অনেকটাই হিন্দু আবেগ চাগিয়ে দিয়েছে। প্রবল চাপে শাসকদল। তাই দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান রাজ্যের সমস্ত ব্লকে লাইভ টেলিকাস্ট করছে তৃণমূল। তবে কি এবার জগন্নাথকেই ত্রাতা হিসেবে বাছলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? যদিও তাঁর পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
“ধর্ম কখনও মুখে প্রচার করে হয় না। ধর্ম হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার জিনিস। মা-মাটি-মানুষ ভাল থাকলে আমিও ভাল থাকব”। মঙ্গলবার সৈকতনগরী দিঘায় নব নির্মিত জগন্নাথ মন্দিরের মহাযজ্ঞে পূর্ণাহুতির পরে এমনটাই বললেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার দ্বার উদঘাটন হতে চলেছে বহু পরীক্ষিত দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের। কিন্তু সোমবার থেকেই তিনি পৌঁছে গিয়েছে সৈকতনগরী দিঘায়। যদিও এই মন্দির সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হলেই দিঘা আর শুধু সৈকতনগরী থাকবে না, দিঘা আধ্যাত্মিক নগরীতে পরিণত হবে বলে দাবি করে চলেছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, রাজ্য সরকার কী পারে কোনও মন্দির বা মসজিদ তৈরি করতে? ভারতের সংবিধান কি রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারকে সেই অধিকার দিয়েছে? তাহলে কিসের ভিত্তিতে রাজ্যের হাউজিং দফতর বা হিডকো এই মন্দির নির্মান করলেন? এখানেই রয়েছে একটা টুইস্ট।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও দিঘাতে আমন্ত্র্ণ জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ হাউজিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার বোর্ড। সেই আমন্ত্রণপত্রের ভিত্তিতেই বিজেপি নেতা একটা খোলা চিঠি লিখেছেন। তাতে তিনি লিখেছেন, অতীতে পশ্চিমবঙ্গ হাউজিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশনের (হিডকো-র) দরপত্র থেকে আমরা জানতে পারি যে দিঘায় হিডকো ‘জগন্নাথ ধাম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ নির্মাণের জন্য আগ্রহী ঠিকাদারদের আহ্বান জানাচ্ছে। অথচ আপনি আমাকে প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করেছেন। আপনি দয়া করে আমাকে জানান দিঘায় ‘জগন্নাথ ধাম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’-এর উদ্বোধন হচ্ছে নাকি জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন হচ্ছে? আপনার যথাযথ উত্তরটা আবশ্যক কারণ হিডকোর আমন্ত্রণ পত্রে মন্দির হচ্ছে না সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তা স্পষ্ট নেই। আপনি এক্ষেত্রে আমাকে একটি লিখিত উত্তর পাঠাতে পারেন নচেৎ আমন্ত্রণ পত্রটি নতুন করে ছেপে তাতেই বিষয়টা স্পষ্ট করুন। শুভেন্দুর এই অভিযোগের আগেই রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, দিঘায় জগন্নাথ ধাম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু উদ্বোধনের আগে যে অনুষ্ঠানসূচি তৈরি হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে মহাষজ্ঞ, জগন্নাথ দেবের প্রাণপ্রতিষ্ঠাও হচ্ছে। কেন এটা হবে, এটাই ছিল বিরোধী দলনেতার মূল উদ্দেশ্য।
অন্যদিকে আমরা দেখলাম, মঙ্গলবার সকাল থেকেই গোটা রাজ্যে সাজ সাজ রব। প্রতিটি ব্লকে মণ্ডপ বেঁধে বড় এলইডি স্ক্রিন লাগিয়ে দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের মহাষজ্ঞের লাইভ স্ট্রিমিং দেখানো হচ্ছে। তৃণমূলের অন্দরে একটা উৎসবের মেজাজ। বিরোধীদের দাবি, আসলে ঠেলায় পড়ে এখন তৃণমূল নেত্রী বোঝাতে চাইছেন, তিনিও হিন্দুদের সঙ্গে আছেন। তাই জগন্নাথ দেবের সাহায্য নিতে মরিয়া তিনি। পিছিয়ে নেই বিজেপিও। দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনের দিন অর্থাৎ ৩০ এপ্রিল কাঁথিতে ‘সনাতনী হিন্দু সম্মেলন’ করার ডাক দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু রাজ্য ও জেলা প্র্শাসন সেই সভার অনুমতি দিচ্ছে না। ফলে বিরোধী দলনেতা হাইকোর্টের দ্বারে যান। মঙ্গলবার বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ কর্মসূচির অনুমতি দেন। তবে কর্মসূচির শর্ত বেঁধে দিয়ে বলেন তিন হাজার লোকের বেশি সমাবেশ করা যাবে না। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়ার কথা জানিয়েছে। অর্থাৎ, জগন্নাথ ও হিন্দু আবেগ নিয়ে শাসক ও বিরোধী দলের তরজা অব্যাহত।
Discussion about this post