২০১০ সালের পরে তৈরি হওয়া সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। বুধবার আদালতের রায় সামনে আসার পরই নির্বাচনী সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ‘আদালতের এই রায় মানছি না। ওবিসি সংরক্ষণ যেমন চলছে, তেমনই চলবে।” এবার এই পরিস্থিতির ঘটনার জন্য রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দায়ী করলেন রাজ্যের প্রাক্তন অনগ্রসর শ্রেণি উন্নয়ন মন্ত্রী তথা প্রাক্তন আইপিএস উপেন বিশ্বাস। তৃণমূল জমানায় ২০১২ সালে ওবিসি বিধি তৈরি হওয়ার সময় রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি উন্নয়ন মন্ত্রী ছিলেন উপেন বিশ্বাস। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উপেন বিশ্বাসের দাবি, “যদি কোথাও কোনও ভুল হয়ে থাকে তাহলে সেটার দায় তৃণমূলের সরকারের নয়। এর দায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর। ওবিসি সংক্রান্ত আইন ২০১২ সালে তৃণমূল আমলে পাশ হলেও ২০১০ সালে বাম আমলে এই বিষয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে ৪১টি মুসলিম সম্প্রদায় সহ মোট ৪২টি সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। সেই সময় বুদ্ধবাবু লিখিতভাবে অর্ডারে লিখেছিলেন, ‘আমি মুসলিমদের সংরক্ষণ দিচ্ছি। আরও দিতে হবে।’ বুদ্ধবাবুর ওই নির্দেশটাই ছিল সংবিধান বিরোধী। সংবিধানে কোথাও জাতির ভিত্তিতে সংরক্ষণ দেওয়ার কথা বলা নেই।” উপেন বিশ্বাসের এমন দাবিকে ঘিরে নতুন করে শোরগোল হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সাল পরবর্তী রাজ্যের দেওয়া সব ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। তার ফলে বাতিল হয় প্রায় ৫ লক্ষ ওবিসি শংসাপত্র। ২০১০ সালের পরে তৃণমূল জমানায় দেওয়া রাজ্যের সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করে কলকাতা হাইকোর্ট। ২০১০ সালের আগে যে যে গোষ্ঠীগুলিকে ওবিসি শ্রেণীভুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছিল সেগুলি বৈধ থাকছে। নির্দেশ বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি রাজা শেখর মান্থার। অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিভুক্তদের সংরক্ষণের সুবিধা দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে যে শংসাপত্র দেওয়া হয়, তাই হল ওবিসি সার্টিফিকেট। বুধবার কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে, এই রায় ঘোষণার পর থেকেই বাতিল হওয়া শংসাপত্র আর কোনও চাকরি প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা যাবে না। তবে এই সার্টিফিকেট ব্যবহারকারী যাঁরা ইতিমধ্যে সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন এই রায়ে তাঁদের উপর প্রভাব পড়বে না। হাইকোর্টের ভিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, ১৯৯৩ সালের পশ্চিমবঙ্গ অনগ্রসর শ্রেণি কমিশন আইন অনুযায়ী নতুন করে ওবিসি তালিকা বানাতে হবে এবং সেই নতুন তালিকা বিধানসভায় অনুমোদন করাতে হবে ৷ ২০১০ এর আগে যারা ওবিসি তালিকাভুক্ত ছিলেন তাঁরা থাকবেন ৷ তবে ২০১০ এর পরবর্তী সময়ে ওবিসি তালিকাভুক্তরা বাতিল হবেন। ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ ২০১০ এর পর যেসব ওবিসি শংসাপত্র তৈরি হয়েছে তা ১৯৯৩ আইনের বিরুদ্ধে। সেই সময় যথাযথ আইন মেনে শংসাপত্র তৈরি করা হয়নি। যার ফলে এই রায়।
Discussion about this post